Tuesday, March 20, 2012

কেন উনিশ সংখ্যাটি তাৎপর্যপূর্ণ ! কুরআন শরিফে উনিশ সংখ্যাটির মোজেযা


‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম’
মিশরের খ্যাতনামা বিজ্ঞানী ড. রশিদ খলিফা কোরআন নিয়ে এক ব্যাপক গবেষণা চালিয়েছেন। তিনি প্রথমিকভাবে কোরআনের প্রতিটি অক্ষর যেভাবে কোরআনে সন্নিবেশিত আছে সেভাবেই তাকে কম্পিউটারে বিন্যস্ত করেন।কোরআনে ১১৪ টি সূরার অবস্থান এবং ২৯ টি সূরার শুরুতে ব্যবহিত ‘হরুফে মোকাত্তায়াত’ যে নিয়মে বিন্যস্ত আছে সে নিয়মের ভিত্তিতে তিনি হিসাব করতে শুরু করেন।এতে করে কোরআনের কিছু অলৌকিক তত্ত্ব তাঁর কম্পিউটার স্ক্রীনে ভেসে উঠে।এ অলৌকিক তত্ত্বের একটি হচ্ছে যে, সমস্ত কোরআন গনিতের এক রহস্যময় বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে আছে। কোরআনের সর্বত্র একটি অভিনব ও বিস্ময়কর গানিতিক সংখ্যার জাল বোনা রয়েছে। সমগ্র কোরআন যেন ১৯ সংখ্যাটিরই একটি সুদৃঢ় বন্ধন।
এই সংখ্যাটির মাধ্যমে গ্রন্থটিকে এমন এক গানিতিক ফর্মুলায় সাজিয়ে রাখা হয়েছে যেন এতে ব্যবহিত বর্ণমালা, শব্দ ও আয়াতসমূহের কোনোরকম পরিবর্তন,পরিবর্ধন, সংযোজন এবং বিয়োজন কারো পক্ষে সম্ভব না হয়।
এই ফর্মুলাটি তৈরি হয়েছে ১৯ সংখ্যাটির গানিতিক অবস্থান দিয়ে।

কোরআন শরীফের প্রত্যেক সূরার শুরুতে ‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম’ আয়াতটি আছে। (সূরা ‘আত-তাওবা’ ব্যতীত)।সূরা ‘আত-তাওবা’র শুরুতে বিসমিল্লাহ না থাকলেও শুরা ‘নামল’ এ যেহেতু এই বাক্যটি দুবার আছে তাই এই সংখ্যাও সূরার  সংখ্যার মত ১১৪ বার ই থেকে গেল।আর ১১৪, ১৯ দ্বারা বিভাজিত।
‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম’ এই ক্ষুদ্র আয়াতটি ৪টি শব্দ এবং ১৯ টি অক্ষর দ্বারা গঠিত।শব্দ চারটি হচ্ছে, ‘ইস্‌ম’, ‘আল্লাহ’, ‘রহমান’ এবং ‘রহীম’।ইস্‌ম অর্থ নাম, আল্লাহ হচ্ছে স্রষ্টার মূল নাম, রহমান অর্থ দাতা, রহীম অর্থ করুণাময়।
** সমগ্র কোরআনে ‘ইস্‌ম’ শব্দটি ১৯ বার এসেছে, যা ১৯ দ্বারা ভাগ করা যায়।
**আল্লাহ শব্দটি ব্যবহিত হয়েছে ২৬৯৮ বার,যা ১৯ দ্বারা বিভাজ্য।
**‘রহমান’ শব্দটি ব্যবহিত হয়েছে ৫৭ বার,যা ১৯ দ্বারা বিভাজ্য।
**‘রহীম’ শব্দটি ব্যবহিত হয়েছে ১১৪ বার, যা ১৯ দ্বারা বিভাজ্য।
কোরআনে বর্ণিত আল্লাহতায়ালার সর্বমোট নামের সংখ্যা (মূল ও গুনবাচক মিলে) ১১৪ বার, যা ১৯ দ্বারা বিভাজ্য।
আরবী ভাষার বর্ণসমূহের নিজস্ব একটি সংখ্যামান আছে। সে হিসাবে ‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম’ এই আয়াতটিতে ব্যবহিত ১৯ হরফের সংখ্যামানের সমষ্টি হচ্ছে ৭৮৬। এই আয়াতের মধ্যে থেকে একই অক্ষরের পুনরাবৃত্তি বাদ দিলে বর্ণ থাকে ১০ টি। (১৯ সংখ্যায় ব্যবহিত অংক দুটির যোগফল ১+৯=১০ )। আর এই পুনরাবৃত্তি (১০টি) হরফের সংখ্যামান হল ৪০৬। ৭৮৬ থেকে ৪০৬ বাদ দিলে বাকী থাকে ৩৮০, যা ১৯ দ্বারা বিভাজ্য।
সূরা ‘আলাক’ এর প্রথম পাঁচ আয়াত দ্বারা দুনিয়ার বুকে আল কোরআন নাযিল শুরু হয়।
**গুনলে দেখা যাবে এই পাঁচ আয়াতে রয়েছে ১৯ টি শব্দ।
**এই পাঁচ আয়াতে অক্ষর রয়েছে ৭৬ টি , যা ১৯ দ্বারা বিভাজ্য।
** এই পাঁচ আয়াত সহ সূরা ‘আলাক’ এর মোট আয়াত সংখ্যা ১৯।
**এই ১৯ টি আয়াতে অক্ষর রয়েছে ২৮৫ টি , যা ১৯ দ্বারা বিভাজ্য।
**পবিত্র কোরআনের শেষের দিক থেকে কেউ যদি গুনতে শুরু করে তাহলে  ১১৪  থেকে     ৯৬ পর্যন্ত গুনে আসলে দেখা যাবে পিছন থেকে ১৯ নং সূরাটি হচ্ছে সূরা ‘আলাক’
>>>>> 
পবিত্র কোরআন যার নিকট এসেছে তিনি হলেন ‘রসূল’, কোরানে রসূল শব্দটি এসেছে ৫১৩ বারযা ১৯ দ্বারা বিভাজ্য।
যার বাণী রসূল বহন করে এনেছেন তিনি হলেন ‘রব’ কোরানে এ শব্দটি এসেছে ১৫২ বার,যা ১৯ দ্বারা বিভাজ্য।
কোরআনের কেন্দ্রীয় দাওয়াত হচ্ছে ‘এবাদত’ কোরআনে এ শব্দটি এসেছে ১৯ বার, যা ১৯ দ্বারা বিভাজ্য।
দাওয়াত এর পরিভাষা হচ্ছে ‘আবদ’, এটিও এসেছে ১৫২ বার, আর যে ব্যক্তি এই ‘আবদ’  এর কাজ করবে তিনি হলেন ‘আবিদ’ কোরানে এটিও এসেছে ১৫২ বার।
আল কোরআনের বিভিন্ন সূরার শুরুতে কিছু বিচিত্র  বর্ণমালা ব্যবহিত হয়েছে, এগুলোকে বলা হয়
‘হরুফে মোকাত্তায়াত’ এগুলোর অর্থ আল্লাহ ছাড়া আর কেউ জানে না, অবশ্য  গবেষণার ফলে এগুলোর একটা গানিতিক রহস্য জানা গেছে। এই মোকাত্তায়াত হরফ গুলো মোট ২৯ টি সূরার শুরুতে ১৪ টি বিভিন্ন বর্ণমালায় ১৪ টি বিভিন্ন পদ্ধতিতে এগুলোকে এ সব জায়গায় বসানো হয়েছে। এদের সম্মিলিত যোগফল হচ্ছে (২৯+১৪+১৪)=৫৭,বার,যা ১৯ দ্বারা বিভাজ্য।
‘আলিফ-লাম-মীম’ মোকাত্তায়াতটি মোট ৬ টি সূরার শুরুতে ব্যবহিত হয়েছে। এই সূরাগুলোর মধ্যে আলিফ,লাম,মীম বর্ণ তিনটি যতোবার ব্যবহিত হয়েছে, তাদের সমষ্টি ১৯ দ্বারা বিভাজ্য।
পরিসংখ্যান মিলিয়ে দেখা যাকঃ
সূরা ‘বাকারায়’ ‘আলিফ’ এসেছে ৪৫০২ বার, ‘লাম’ ৩২০২ এবং ‘মীম’ এসেছে ২১৯৫, এ সবগুলোর সমষ্টি দাঁড়ায় ৯৮৯৯,  যা ১৯ দ্বারা বিভাজ্য।
সূরা ‘আলে ইমরান’ –এ ‘আলিফ’ এসেছে ২৫২১ বার, ‘লাম’ ১৮৯২ এবং ‘মীম’ এসেছে ১২৪৯, এ সবগুলোর সমষ্টি দাঁড়ায় ৫৬৬২,  যা ১৯ দ্বারা বিভাজ্য।
সূরা ‘আন কাবুত’ –এ ‘আলিফ’ এসেছে ৭৭৪ বার, ‘লাম’ ৫৫৪ এবং ‘মীম’ এসেছে ৩৪৪, এ সবগুলোর সমষ্টি দাঁড়ায় ১৬৭২,  যা ১৯ দ্বারা বিভাজ্য।
সূরা ‘রোম’ –এ ‘আলিফ’ এসেছে ৫৪৪ বার, ‘লাম’ ৩৯৩ এবং ‘মীম’ এসেছে ৩১৭, এ সবগুলোর সমষ্টি দাঁড়ায় ১২৫৪,  যা ১৯ দ্বারা বিভাজ্য।
সূরা ‘লোকমান’ –এ ‘আলিফ’ এসেছে  ৩৪৭ বার, ‘লাম’ ২৯৭ এবং ‘মীম’ এসেছে ১৭৩, এ সবগুলোর সমষ্টি দাঁড়ায় ৮১৭,  যা ১৯ দ্বারা বিভাজ্য।
সূরা ‘সাজদায়’ ‘আলিফ’ এসেছে ২৫৭ বার, ‘লাম’ ১৫৫ এবং ‘মীম’ এসেছে ১৫৮, এ সবগুলোর সমষ্টি দাঁড়ায় ৫৭০,  যা ১৯ দ্বারা বিভাজ্য।
আবার এই সূরাগুলোর অক্ষরগুলো গুনলে দেখা যাবে মোট ‘আলিফ’ এসেছে ৮৯৪৫ বার, মোট ‘লাম’ ৬৪৯৩ এবং মোট ‘মীম’ এসেছে ৪৪৩৬, এ সবগুলোর সমষ্টি দাঁড়ায় ১৯৮৭৪,  যা ১৯ দ্বারা বিভাজ্য।
সূরা ‘মারইয়াম’ এর মোকাত্তায়াত গঠিত হয়েছে পাঁচটি ভিন্ন ধরনের বর্ণ দিয়ে, এগুলো হল , ক্বাফ, হা, ইয়া,আইন,ছোয়াদ। লক্ষ্য করলে দেখা যাবে এ সূরায়ঃ
‘ক্বাফ’ এসেছে ১৩৭ বার, ‘হা’ এসেছে ১৭৫ বার, ‘ইয়া’ এসেছে ৩৪৩ বার, আইন  এসেছে ১১৭ বার, সোয়াদ এসেছে ২৬ বার,এই পাঁচটি হরফের মোট যোগফল  (১৩৭+১৭৫+৩৪৩+১১৭+২৬)= ৭৯৮, যা ১৯ দ্বারা বিভাজ্য।
সূরা ‘আ’রাফ’-এর মোকাত্তায়াত হচ্ছে ‘আলিফ’, ‘লাম’, ‘মীম’, ‘সোয়াদ’। এই সূরাটিতে
‘আলিফ’ এসেছে ২৫২৯ বার।
‘লাম’ এসেছে  ১৫৩০ বার।
‘মীম’ ব্যবহিত হয়েছে ১১৬৪ বার।
‘সোয়াদ’ এসেছে ৯৭ বার।
মোকাত্তায়াত চারটির যোগফল (২৫২৯+১৫৩০+১১৬৪+৯৭)= ৫৩২০, যা ১৯ দ্বারা বিভাজ্য।
সূরা ‘ইয়াসীন’ এর মোকাত্তায়াত হচ্ছে ‘ইয়া’ এবং ‘সীন’। সূরাটিতে এই দুটি অক্ষর ব্যবহিত হয়েছে ২৮৫ বার, যা ১৯ দ্বারা বিভাজ্য।
সূরা ‘মোমেন’  থেকে ‘সূরা’ ‘আহক্বাফ’ পর্যন্ত এই সাতটি সূরার শুরুতে রয়েছে একই মোকাত্তায়াত – ‘হা’ এবং ‘মীম’। ধারাবাহিক ভাবে এ সাতটি সূরায় ‘হা’ এবং ‘মীম’ এ দুটি অক্ষর মোট ২১৪৭ বার ব্যবহিত হয়েছে, যা ১৯ দ্বারা বিভাজ্য।
সূরা ‘ইউনুস’ এবং সূরা ‘হুদ’ শুরু হয়েছে ‘আলিফ’ ‘লাম’, ‘রা’ এই মোকাত্তায়াত দিয়ে ।সূরা দুটিতে হরফ তিনটি ব্যবহিত হয়েছে ২৮৮৯ বার , এটি ১৯ দ্বারা  বিভাজ্য।
সূরা ‘ইউসূফ’, সূরা ‘ইবরাহীম’ এবং সূরা ‘আল হেজর্’ এ একই মোকাত্তায়াত রয়েছে অর্থাৎ  ‘আলিফ’ ‘লাম’, ‘রা’।
সূরা ‘ইউসূফ’ এ হরফগুলো এসেছে ২৩৭৫ বার, যা ১৯ দ্বারা বিভাজ্য।
সূরা ‘ইবরাহীম’ এ হরফগুলো এসেছে ১১৯৭ বার, যা ১৯ দ্বারা বিভাজ্য।
সূরা ‘আল হেজর্’এ হরফগুলো এসেছে ৯১২ বার, যা ১৯ দ্বারা বিভাজ্য।
মোকাত্তায়াত সম্বলিত সর্বশেষ সূরা হচ্ছে সূরা ‘আল কালাম’।এর শুরুতে  মাত্র একটি হরফ বিশিষ্ট মোকাত্তায়াত ব্যবহিত হয়েছে, সেটি হচ্ছে ‘নূন’ , এ সূরায় এ অক্ষরটি এসেছে ১৩৩ বার যা অব্শ্যই ১৯ দ্বারা  বিভাজ্য।
শুধু ‘ক্বাফ’ অক্ষর দিয়ে শুরু হয়েছে সূরা ‘ক্বাফ’ , এখানে ক্বাফ অক্ষরটি গণনায় ঠিক রাখার জন্য আল্লাহতায়ালা যে ব্যবস্থা নিয়েছেন তা লক্ষণীয়।
আল্লাহতায়ালা কোরআনে লূত সম্প্রদায় এর কথা বারটি জায়গায় উল্লেখ করেছেন এবং প্রতিবারই সম্বোধন করেছেন ‘ক্বওমে লূত’ বলে। কিন্তু সূরা ‘ক্বাফ’ এর ১৩ নম্বর আয়াতে এসে  ‘ক্বওমে লূত’ এর স্থলে ‘ইখওয়ানু লুত’ বলা হয়েছে , অর্থের দিক থেকে উভয়টাই সমান। ব্যতিক্রম করার কারণ হচ্ছে এখানে যদি  ‘ক্বওমে লূত’ ব্যবহার করা হত তাহলে এ সূরায় ক্বাফ এর সংখ্যা হত ৫৮ টি ,যা ১৯ দ্বারা বিভাজ্য নয়, আর ‘ইখওয়ানু লুত’ বলার কারনে এখানে ‘ক্বাফ’ হরফের সংখ্যা হল ৫৭ , যা নিসন্দেহে ১৯, দ্বারা বিভাজ্য হয়।
কি  আশ্চর্য আল্লাহর কুদরত।


            অনিচ্ছা সত্ত্বেও যদি লেখায় কোন প্রকার ভুল ত্রুটি থেকে থাকে তাহলে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখার জন্য সকলের নিকট অনুরোধ রইল।

লেখাটি পড়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।

No comments:

Post a Comment