ক. জান্নাত
جنة এক বচন, বহুবচনে جنات, অর্থ ঘন সন্নিবেশিত বাগান, বাগ-বাগিচা। আরবীতে বাগানকে روضة (রওদ্বাতুন) এবং حديقة (হাদীকাতুন) ও বলা হয়। কিন্তু جنات (জান্নাত) শব্দটি আল্লাহ রব্বুল ‘আলামীনের নিজস্ব একটি পরিভাষা। পারিভাষিক অর্থে জান্নাত বলতে এমন স্থানকে বোঝায়, যা আল্লাহ রব্বুল ‘আলামীন তাঁর অনুগত বান্দাদের জন্য নির্দিষ্ট করে রেখেছেন। যা দিগন্ত বিস্তৃত নানা রকম ফুলে ফুলে সুশোভিত সুরম্য অট্টালিকা সম্বলিত মনোমুগ্ধকর বাগান; যার পাশ দিয়ে প্রবাহমান বিভিন্ন ধরনের নদী-নালা ও ঝর্ণাধারা। যেখানে চির বসন্ত বিরাজমান।
আমরা জান্নাতকে জান্নাতও বলে থাকি। জান্নাত ফার্সী শব্দ। এখানে আমরা আরবী শব্দটিই ব্যবহার করবো।
জান্নাত চিরশান্তির জায়গা। সেখানে আরাম- আয়েশ, সুখ-শান্তি, আমোদ-প্রমোদ, চিত্ত বিনোদন ও আনন্দ-আহলাদের চরম ও পরম ব্যবস্থা রয়েছে। সেখানে ভোগ-বিলাস ও পানাহারের আতিশয্য। জান্নাতীরা যা কামনা করবে কিংবা কোনো কিছু পাওয়ার আহবান জানাবে, সকল কিছু পাবে। সেখানে সবাই যুবক হয়ে বাস করবে। শরীরে কোনো রোগ-শোক, জরাজীর্ণতা, মন্দা, বার্ধক্য, দুর্বলতা ও অপারগতা থাকবে না। যত ধরনের ফল-ফলাদি, খাদ্য-খাবার, পানীয়, দুধ, মধু সুস্বাদু খাবার সব খেতে পারবে। ভোগ-বিলাসের সকল উপায়-উপকরণ বিদ্যমান। সেগুলো স্বাদ ও গন্ধে অপূর্ব। আমোদ-প্রমোদ, ভ্রমন-বিহার, খেলা-ধুলা, বেড়ানো, বাজার করা ও শুভেচ্ছা-স্বাগত জানাতে পারবে। প্রাচুর্যের কোনো অভাব হবে না। দ্রুতগামী যানবাহনসহ মনের ইচ্ছা চোখের নিমির্ষে পূরণ করতে পারবে।
নারীদের জন্য থাকবে নয়নাভিরাম স্বামী এবং স্বামীদের জন্য থাকবে নয়নাভিরাম স্ত্রী ও রূপবতী লাবণ্যময়ী হুর। তারা সেখানে সুখী-সুন্দর দাম্পত্য জীবন-যাপন করবে। মানুষ সেখানে পেশাব-পায়খানা, নাকের শ্লেষ্মা থেকে মুক্ত এবং নারীরা ঋতুমুক্ত হবে।
এক কথায়, পরম ও চরম শান্তি বলতে যা বুঝায়, তা সবই জান্নাতে পাওয়া যাবে। দুনিয়ার সুখ-শান্তির যত ব্যবস্থা আছে, জান্নাতের সুখ-শান্তির তুলনায় তা কিছুই না। বরং তা দুনিয়ার সকল আরাম-আয়েশকে হার মানাবে। মানুষ সুখ পেতে চায়। তাই পরম সুখ লাভের প্রতিযোগিতায় অবতীর্ণ হওয়া উচিত।
জান্নাতের ব্যাপক পরিচিতি সম্পর্কে সংক্ষেপে এক বর্ণনায় মহান আল্লাহ বলেন:
﴿فَلَا تَعۡلَمُ نَفۡسٞ مَّآ أُخۡفِيَ لَهُم مِّن قُرَّةِ أَعۡيُنٖ جَزَآءَۢ بِمَا كَانُواْ يَعۡمَلُونَ ١٧﴾ [السجدة: ١٧]
‘কেউ জানে না তার জন্য কৃতকর্মের কি কি নয়নাভিরাম বিনিময় লুকায়িত আছে।’’ (সূরা সাজদাহ: ১৭)
আবু হোরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: মহান আল্লাহ রাববুল আলামীন এরশাদ করেন,
«أَعْدَدْتُ لِعِبَادِي الصَّالِحِينَ مَا لاَ عَيْنٌ رَأَتْ، وَلاَ أُذُنٌ سَمِعَتْ، وَلاَ خَطَرَ عَلَى قَلْبِ بَشَرٍ، فَاقْرَءُوا إِنْ شِئْتُمْ فَلاَ تَعْلَمُ نَفْسٌ مَا أُخْفِيَ لَهُمْ مِنْ قُرَّةِ أَعْيُنٍ»
“আমি আমার নেক বান্দাদের জন্য এমন নেয়ামত তৈরি করে রেখেছি, যা কোনো চক্ষু দেখে নি, কোনো কান শোনে নি এবং এমনকি কোনো মানুষ তা কল্পনাও করতে পারে না। এরপর তিনি বলেন, যদি তোমরা চাও, তাহলে নিম্নোক্ত আয়াতটি পড়ো। যার অর্থ হলো: “কেউ জানে না, তার জন্য কি কি নয়নাভিরাম বিনিময় লুকায়িত আছে।” (বুখারী, ৩২৪৪; মুসলিম, ২৮২৪)
জান্নাত মোট আট প্রকারঃ
আট প্রকার জান্নাতের কথাই আল-কুরআন ও সহীহ হাদীসে উল্লেখ করা হয়েছে। প্রকারগুলো হচ্ছে :
1) জান্নাতুল ফিরদাউস।
2) জান্নাতুন্ নায়ীম।
3) জান্নাতুল মাওয়া।
4) জান্নাতুল আদন।
5) জান্নাতু দারুস সালাম।
6) জান্নাতুদ দারুল খুলদ।
7) জান্নাতু দারুল মাকাম।
8) জান্নাতু দারুল কারার।
সম্পূর্ণ জান্নাত হবে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত (Air condition)
জান্নাতে সর্বদা বসন্তকাল বিরাজ করবে। ফুল-ফলের সমাহার এবং সৌন্দর্য্য শ্যামলতা কখনো ম্লান হবে না। এমন কি গোটা জান্নাত শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত বা Air condition হবে। মহান আল্লাহ বলেন,
﴿ لَا يَرَوۡنَ فِيهَا شَمۡسٗا وَلَا زَمۡهَرِيرٗا ١٣ ﴾ [الانسان: ١٣]
অর্থ্যাৎ- ‘তাদেরকে সেখানে (জান্নাতে) না সূর্যতাপ জ্বালাতন করবে না শৈত্য প্রবাহ।’ (সূরা দাহর: ১৩)
জান্নাতে কোন দুঃখ-কষ্ট থাকবে না
পৃথিবীতে মানুষ যতো বিত্তশালী হোক এবং যতো সুখ-শান্তিই ভোগ করুক না কেন তবু কোনো না কোনো দুঃখ বা অশান্তি থাকেই, কোনো মানুষের পক্ষেই সম্পূর্ণ সুখী হওয়া সম্ভব নয়। কিন্তু জান্নাতে কোনো দুঃখই থাকবে না, এমন কি পৃথিবীতে মাল্টি বিলিয়ন হয়েও আরো বেশী পাওয়ার জন্য এবং ভোগ করার জন্য দুঃখের শেষ থাকে না। পক্ষান্তরে জান্নাতীগণ- যাকে সবচেয়ে ছোট জান্নাত দেয়া হবে তারও কোন অনুতাপ বা দুঃখ থাকবে না। আল্লাহ নিজেই এ ব্যাপারে সাক্ষ্য দিচ্ছেন,
﴿ لَا يَمَسُّهُمۡ فِيهَا نَصَبٞ وَمَا هُم مِّنۡهَا بِمُخۡرَجِينَ ٤٨ ﴾ [الحجر: ٤٨]
অর্থঃ ‘তারা সেখানে কখনও কোন দুঃখ-কষ্টের সম্মুখীন হবে না এবং কোনদিন সেখান থেকে তাদেরকে বের করে দেয়া হবে না।’ (সূরা হিজর: ৪৮)
অন্যত্র বলা হয়েছে,
﴿ ٱلَّذِيٓ أَحَلَّنَا دَارَ ٱلۡمُقَامَةِ مِن فَضۡلِهِۦ لَا يَمَسُّنَا فِيهَا نَصَبٞ وَلَا يَمَسُّنَا فِيهَا لُغُوبٞ ٣٥ ﴾ [فاطر: ٣٥]
অর্থঃ ‘(জান্নাতীগণ বলবে) তিনি আমাদেরকে নিজের অনুগ্রহে চিরন্তনী আবাস্থল দান করেছেন এবং আমাদের কোন দুঃখ এবং ক্লান্তি নেই।’ (সূরা ফাতির: ৩৫)
নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«مَنْ يَدْخُلُ الْجَنَّةَ يَنْعَمُ لَا يَبْأَسُ، لَا تَبْلَى ثِيَابُهُ وَلَا يَفْنَى شَبَابُهُ»
অর্থঃ ‘যারা জান্নাতে যাবে তারা সর্বদা স্বচ্ছল অবস্থায় থাকবে, দারিদ্র ও অনাহারে কষ্ট পাবে না। তাদের পোশাক পুরাতন হবে না এবং তাদের যৌবনও কোনদিন শেষ হবে না।’ (মুসলিম: ২৮৩৬)
জান্নাতে অশ্লীল কথা শুনা যাবে না
পৃথিবীতে যতো ঝগড়া-ফাসাদ সমস্তই স্বার্থপরতা, অহংকার ও হিংসার কারণে সংঘটিত হয়ে থাকে। জান্নাতে স্বার্থপরতা, অহংকার, হিংসা ইত্যাদি থাকবে না, তাই সেখানে গীবত, পরনিন্দা, পরচর্চা, ঝগড়া-বিবাদ, অশ্লীল কথাবার্তা ইত্যাদি থাকবে না। সেখানে শুধু সম্প্রীতি ও সৌন্দর্যপূর্ণ পরিবেশ বিরাজ করবে।
মহান আল্লাহ বলেন,
﴿ لَا يَسۡمَعُونَ فِيهَا لَغۡوٗا وَلَا تَأۡثِيمًا ٢٥ إِلَّا قِيلٗا سَلَٰمٗا سَلَٰمٗا ٢٦ ﴾ [الواقعة: ٢٥، ٢٦]
অর্থঃ ‘সেখানে তারা বেহুদা ও অশ্লীল কথাবার্তা শুনতে পাবে না। যে কথাবার্তা হবে তা ঠিকঠাক ও যথাযথ (সম্প্রীতি পূর্ণ) হবে।’ (সূরা ওয়াকি‘আহ্: ২৫-২৬)
অন্যত্র বলা হয়েছে,
﴿ لَّا يَسۡمَعُونَ فِيهَا لَغۡوٗا وَلَا كِذَّٰبٗا ٣٥ ﴾ [النبا: ٣٥]
অর্থঃ ‘সেখানে তারা কোন অপ্রয়োজনীয় তাৎপর্যহীন ও মিথ্যা কথা শুনবে না।’ (সূরা নাবা: ৩৫)
অবশ্য এ ব্যাপারে জান্নাতবাসীদেরকে জান্নাতের দ্বাররক্ষীগণই সুসংবাদ প্রদান করবে। ইরশাদ হচ্ছে,
﴿حَتَّىٰٓ إِذَا جَآءُوهَا وَفُتِحَتۡ أَبۡوَٰبُهَا وَقَالَ لَهُمۡ خَزَنَتُهَا سَلَٰمٌ عَلَيۡكُمۡ طِبۡتُمۡ فَٱدۡخُلُوهَا خَٰلِدِينَ ٧٣ ﴾ [الزمر: ٧٣]
অর্থঃ ‘অতঃপর যখন তারা সেখানে (প্রবেশ করার জন্যে) আসবে, তখন দ্বাররক্ষীগণ তাদের জন্য দরজাসমূহ খুলে রাখবে এবং জান্নাতীদেরকে সম্বোধন করে বলবে, আপনাদের প্রতি অবারিত শান্তি বর্ষিত হোক। অনন্তকালের জন্য এখানে প্রবেশ করুন।’ (সূরা যুমার: ৭৩)।
জান্নাতীদের আর মৃত্যু হবে না
পৃথিবীতে যতোগুলো বাস্তব ও চাক্ষুষ বস্তু আছে তার মধ্যে মৃত্যু একটি। সত্যি কথা বলতে কি, মানুষ পার্থিব কোনো বস্তু থেকেই অমনোযোগী ও গাফেল নয় একমাত্র মৃত্যু ছাড়া। যদিও আমাদের প্রত্যেককেই মৃত্যুর মুখোমুখি হতে হবে। তবুও মৃত্যুকে আমরা ভীতির চোখে দেখি এবং মৃত্যু থেকে পালিয়ে বেড়াবার ব্যর্থ প্রয়াস পাই। এ ভীতিকর অবস্থা থেকে মুক্তির একমাত্র গ্যারান্টি থাকবে জান্নাতীদের জন্য। মহান আল্লাহ বলেন,
﴿ لَا يَذُوقُونَ فِيهَا ٱلۡمَوۡتَ إِلَّا ٱلۡمَوۡتَةَ ٱلۡأُولَىٰۖ وَوَقَىٰهُمۡ عَذَابَ ٱلۡجَحِيمِ ٥٦ ﴾ [الدخان: ٥٦]
অর্থঃ ‘সেখানে তারা আর কখনো মৃত্যুর মুখোমুখি হবে না। পৃথিবীতে একবার যে মৃত্যু হয়েছে সেটাই তাদের জন্য যথেষ্ট। আর আল্লাহ তাদেরকে জাহান্নামের শাস্তি থেকে বাঁচিয়ে দেবেন।’ (সূরা দোখান: ৫৬)
নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
»يُنَادِي مُنَادٍ: إِنَّ لَكُمْ أَنْ تَصِحُّوا فَلَا تَسْقَمُوا أَبَدًا، وَإِنَّ لَكُمْ أَنْ تَحْيَوْا فَلَا تَمُوتُوا أَبَدًا، وَإِنَّ لَكُمْ أَنْ تَشِبُّوا فَلَا تَهْرَمُوا أَبَدًا، وَإِنَّ لَكُمْ أَنْ تَنْعَمُوا فَلَا تَبْأَسُوا أَبَدًا«
‘যখন জান্নাতীগণ জান্নাতে প্রবেশ করবে তখন এক ঘোষক ঘোষণা করবে- ‘‘হে জান্নাতীগণ! এখন আর তোমরা কোনোদিন অসুস্থ হয়ে পড়বে না। সর্বদা সুস্থ ও স্বাস্থ্যবান থাকবে। কোনোদিন আর তোমাদের মৃত্যু হবে না, অনন্তকাল জীবিত থাকবে। সর্বদা যুবক হয়ে থাকবে কখনো বুড়ো হবে না। সর্বদা অফুরন্ত নেয়ামত ভোগ করবে কোনোদিন তা শেষ হবে না এবং কখনো দুঃখ ও অনাহারে থাকবে না।’ (মুসলিম, ২৮৩৭; তিরমিযী, ৩২৪৬)
জান্নাতের প্রশস্ততা হবে আসমান-যমীনের সমান
আল্লাহ বলেন,
﴿ ۞وَسَارِعُوٓاْ إِلَىٰ مَغۡفِرَةٖ مِّن رَّبِّكُمۡ وَجَنَّةٍ عَرۡضُهَا ٱلسَّمَٰوَٰتُ وَٱلۡأَرۡضُ أُعِدَّتۡ لِلۡمُتَّقِينَ ١٣٣ ﴾ [ال عمران: ١٣٣]
“তোমরা তোমাদের প্রভুর ক্ষমা ও জান্নাতের দিকে দ্রুত ধাবিত হও, যার প্রশস্ততা হবে আসমান-যমীনের সমান। যা মোত্তাকীদের জন্য তৈরি করা হয়েছে”। (সূরা আলে-ইমরান: ১৩৩)
জান্নাতের দরজাসমূহ
আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿ جَنَّٰتُ عَدۡنٖ يَدۡخُلُونَهَا وَمَن صَلَحَ مِنۡ ءَابَآئِهِمۡ وَأَزۡوَٰجِهِمۡ وَذُرِّيَّٰتِهِمۡۖ وَٱلۡمَلَٰٓئِكَةُ يَدۡخُلُونَ عَلَيۡهِم مِّن كُلِّ بَابٖ ٢٣ سَلَٰمٌ عَلَيۡكُم بِمَا صَبَرۡتُمۡۚ فَنِعۡمَ عُقۡبَى ٱلدَّارِ ٢٤ ﴾ [الرعد: ٢٣، ٢٤]
“স্থায়ী জান্নাত, তাতে তারা প্রবেশ করবে এবং তাদের পিতা-মাতা, পতি-পত্নী ও সন্তান-সন্ততিদের মধ্যে যারা সৎকাজ করেছে তারাও। আর ফেরেশ্তাগণ তাদের কাছে উপস্থিত হবে প্রত্যেক দরজা দিয়ে এবং বলবে, তোমরা ধৈর্য ধারণ করেছ বলে তোমাদের প্রতি শান্তি; আর আখেরাতের এ পরিণাম কতই না উত্তম।”(সূরা আর-রাদ: ২৩ – ২৪)
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা আরও বলেন:
﴿هَٰذَا ذِكۡرٞۚ وَإِنَّ لِلۡمُتَّقِينَ لَحُسۡنَ مََٔابٖ ٤٩ جَنَّٰتِ عَدۡنٖ مُّفَتَّحَةٗ لَّهُمُ ٱلۡأَبۡوَٰبُ ٥٠﴾ [ص: ٤٩، ٥٠]
“এ এক স্মরণ। মুত্তাকীদের জন্য রয়েছে উত্তম আবাস— চিরস্থায়ী জান্নাত, যার দরজাসমূহ তাদের জন্য উন্মুক্ত।”(সূরা সদ: ৪৯ – ৫০)
জান্নাতীদের চেহারা হবে ধবধবে সাদা এবং তারা ৬০ হাত লম্বা হবে
আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«خلق الله عز و جل آدم على صورته , طوله ستون ذراعا , فلما خلقه ؛ قال : اذهب فسلم على أولئك النفر من الملائكة جلوس , فاستمع ما يحيونك ؛ فإنها تحيتك وتحية ذريتك » . فقال : السلام عليكم . فقالوا : السلام عليك ورحمة الله . فزادوه : ورحمة الله . فكل من يدخل الجنة على صورة آدم , فلم يزل الخلق ينقص بعد حتى الآن » . (رواه البخاري و مسلم) .
জান্নাতে প্রবেশকারী ১ম দলটির চেহারা হবে পূর্ণিমার রাতের উজ্জ্বল চাঁদের আলোর মতো। পরবর্তী দলগুলোর চেহারা হবে উজ্জ্বল জ্যোতিস্কের মতো। তাদের পেশাব-পায়খানা নাকের শ্লেষ্মা ও থুথু হবে না। চিরুনী হবে সোনার, ঘাম হবে মেশকের মতো সুঘ্রাণ, আগর কাঠের সুঘ্রাণযুক্ত ধোঁয়া বিতরণ করা হবে, স্ত্রীরা হবে আয়াতলোচনা, সবার চরিত্র এক ও অভিন্ন এবং আকৃতি হবে তাদের পিতা আদমের মতো ৬০ হাত লম্বা। (বুখারী, ৬২২৭; ও মুসলিম, ২৮৪১)
নিম্নতম জান্নাতীর মর্যাদা
মুগীরা ইবন শো‘বা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
« سَأَلَ مُوسَى رَبَّهُ مَا أَدْنَى أَهْلِ الْجَنَّةِ مَنْزِلَةً قَالَ هُوَ رَجُلٌ يَجِىءُ بَعْدَ مَا أُدْخِلَ أَهْلُ الْجَنَّةِ الْجَنَّةَ فَيُقَالُ لَهُ ادْخُلِ الْجَنَّةَ. فَيَقُولُ أَىْ رَبِّ كَيْفَ وَقَدْ نَزَلَ النَّاسُ مَنَازِلَهُمْ وَأَخَذُوا أَخَذَاتِهِمْ فَيُقَالُ لَهُ أَتَرْضَى أَنْ يَكُونَ لَكَ مِثْلُ مُلْكِ مَلِكٍ مِنْ مُلُوكِ الدُّنْيَا فَيَقُولُ رَضِيتُ رَبِّ. فَيَقُولُ لَكَ ذَلِكَ وَمِثْلُهُ وَمِثْلُهُ وَمِثْلُهُ وَمِثْلُهُ. فَقَالَ فِى الْخَامِسَةِ رَضِيتُ رَبِّ. فَيَقُولُ هَذَا لَكَ وَعَشَرَةُ أَمْثَالِهِ وَلَكَ مَا اشْتَهَتْ نَفْسُكَ وَلَذَّتْ عَيْنُكَ . فَيَقُولُ رَضِيتُ رَبِّ. قَالَ رَبِّ فَأَعْلاَهُمْ مَنْزِلَةً قَالَ أُولَئِكَ الَّذِينَ أَرَدْتُ غَرَسْتُ كَرَامَتَهُمْ بِيَدِى وَخَتَمْتُ عَلَيْهَا فَلَمْ تَرَ عَيْنٌ وَلَمْ تَسْمَعْ أُذُنٌ وَلَمْ يَخْطُرْ عَلَى قَلْبِ بَشَرٍ » . (رواه مسلم) .
“একবার মূসা আলাইহিস সালাম তাঁর প্রতিপালককে জিজ্ঞেস করেছিলেন, জান্নাতে সবচেয়ে নিম্নস্তরের লোকটি কে হবে? আল্লাহ বললেন: সে হল এমন এক ব্যক্তি, যে জান্নাতবাসীদেরকে জান্নাতে প্রবেশ করানোর পর আসবে। তাকে বলা হবে, জান্নাতে প্রবেশ কর। সে বলবে: হে প্রতিপালক! তা কিরূপে হবে? জান্নাতীগণ তো নিজ নিজ আবাসের অধিকারী হয়ে গেছেন। তারা তাদের প্রাপ্য নিয়েছেন। তাকে বলা হবে: পৃথিবীর কোনো সম্রাটের সাম্রাজ্যের সমপরিমাণ সম্পদ নিয়ে কি তুমি সন্তুষ্ট হবে? সে বলবে: হে প্রভু! আমি এতে খুশি। আল্লাহ বলবেন: তোমাকে উক্ত পরিমাণ সম্পদ দেয়া হল, সাথে দেয়া হল আরও সমপরিমাণ, আরও সমপরিমাণ, আরও সমপরিমাণ, আরও সমপরিমাণ, আরও সমপরিমাণ ; পঞ্চমবারে সে বলে উঠবে, আমি পরিতৃপ্ত, হে আমার রব! আল্লাহ বলবেন: আরও দশগুণ দেয়া হল। এ সবই তোমার জন্য। তাছাড়া তোমার জন্য রয়েছে এমন জিনিস, যার দ্বারা মন তৃপ্ত হয়, চোখ জুড়ায়। লোকটি বলবে: হে আমার প্রভু! আমি পরিতৃপ্ত। মূসা আলাইহিস সালাম বললেন: হে আমার রব! তাঁদের মধ্যে সর্বোচ্চ কে? আল্লাহ তা‘আলা বলবেন: এরা তারাই, যাদের মর্যাদা আমি নিজহাতে সুপ্রতিষ্ঠিত করেছি এবং তার উপর মোহর করে দিয়েছি; এমন জিনিস তাদের জন্য রেখেছি, যা কোন চক্ষু কখনও দেখেনি, কোন কান কখনও শুনে নি এবং কারও অন্তরে কখনও কল্পনারও উদয় হয় নি।”[1]
জান্নাতের স্তরসমূহ
আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿ وَمَن يَأۡتِهِۦ مُؤۡمِنٗا قَدۡ عَمِلَ ٱلصَّٰلِحَٰتِ فَأُوْلَٰٓئِكَ لَهُمُ ٱلدَّرَجَٰتُ ٱلۡعُلَىٰ ٧٥ ﴾ [طه: ٧٥]
“আর যারা তাঁর (আল্লাহর) কাছে আসবে সৎকর্ম করে, তাদের জন্যই থাকবে উচ্চতম মর্যাদা।” [সূরা ত্বা-হা: ৭৫]
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা আরও বলেন:
﴿ كُلّٗا نُّمِدُّ هَٰٓؤُلَآءِ وَهَٰٓؤُلَآءِ مِنۡ عَطَآءِ رَبِّكَۚ وَمَا كَانَ عَطَآءُ رَبِّكَ مَحۡظُورًا ٢٠ ٱنظُرۡ كَيۡفَ فَضَّلۡنَا بَعۡضَهُمۡ عَلَىٰ بَعۡضٖۚ وَلَلۡأٓخِرَةُ أَكۡبَرُ دَرَجَٰتٖ وَأَكۡبَرُ تَفۡضِيلٗا ٢١ ﴾ [الاسراء: ٢٠، ٢١]
“তোমার প্রতিপালক তাঁর দান দ্বারা এদেরকে এবং ওদেরকে সাহায্য করেন; আর তোমার প্রতিপালকের দান অবারিত। লক্ষ্য কর, আমি কিভাবে ওদের এক দলকে অপরের উপর শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছি, আর আখেরাত তো নিশ্চয়ই মর্যাদায় মহত্তর ও গুণে শ্রেষ্ঠতর।” (সূরা আল-ইসরা: ২০-২১)
আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন:
﴿ لَّا يَسۡتَوِي ٱلۡقَٰعِدُونَ مِنَ ٱلۡمُؤۡمِنِينَ غَيۡرُ أُوْلِي ٱلضَّرَرِ وَٱلۡمُجَٰهِدُونَ فِي سَبِيلِ ٱللَّهِ بِأَمۡوَٰلِهِمۡ وَأَنفُسِهِمۡۚ فَضَّلَ ٱللَّهُ ٱلۡمُجَٰهِدِينَ بِأَمۡوَٰلِهِمۡ وَأَنفُسِهِمۡ عَلَى ٱلۡقَٰعِدِينَ دَرَجَةٗۚ وَكُلّٗا وَعَدَ ٱللَّهُ ٱلۡحُسۡنَىٰۚ وَفَضَّلَ ٱللَّهُ ٱلۡمُجَٰهِدِينَ عَلَى ٱلۡقَٰعِدِينَ أَجۡرًا عَظِيمٗا ٩٥ دَرَجَٰتٖ مِّنۡهُ وَمَغۡفِرَةٗ وَرَحۡمَةٗۚ وَكَانَ ٱللَّهُ غَفُورٗا رَّحِيمًا ٩٦ ﴾ [النساء: ٩٥، ٩٦]
“মুমিনদের মধ্যে যারা অক্ষম নয় অথচ ঘরে বসে থাকে এবং যারা আল্লাহর পথে স্বীয় ধন-প্রাণ দ্বারা জিহাদ করে, তারা সমান নয়। যারা স্বীয় ধন-প্রাণ দ্বারা জিহাদ করে আল্লাহ তাদেরকে, যারা ঘরে বসে থাকে তাদের উপর মর্যাদা দিয়েছেন; তাদের প্রত্যেকের জন্য আল্লাহ জান্নাতের ওয়াদা করেছেন। যারা ঘরে বসে থাকে তাদের উপর যারা জিহাদ করে তাদেরকে আল্লাহ মহাপুরস্কারের ক্ষেত্রে শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছেন। এসব তাঁর কাছ থেকে মর্যাদা, ক্ষমা ও দয়া; আর আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।”(সূরা আন-নিসা: ৯৫ – ৯৬)
আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন:
﴿ يَرۡفَعِ ٱللَّهُ ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ مِنكُمۡ وَٱلَّذِينَ أُوتُواْ ٱلۡعِلۡمَ دَرَجَٰتٖۚ وَٱللَّهُ بِمَا تَعۡمَلُونَ خَبِيرٞ ١١ ﴾ [المجادلة: ١١]
“তোমাদের মধ্যে যারা ঈমান এনেছে এবং যাদেরকে জ্ঞান দান করা হয়েছে আল্লাহ তাদেরকে মর্যাদায় উন্নত করবেন; আর তোমরা যা কর, আল্লাহ সে সম্পর্কে সবিশেষ অবহিত।”(সূরা আল-মুজাদালা: ১১)
আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন:
﴿أَفَمَنِ ٱتَّبَعَ رِضۡوَٰنَ ٱللَّهِ كَمَنۢ بَآءَ بِسَخَطٖ مِّنَ ٱللَّهِ وَمَأۡوَىٰهُ جَهَنَّمُۖ وَبِئۡسَ ٱلۡمَصِيرُ ١٦٢ هُمۡ دَرَجَٰتٌ عِندَ ٱللَّهِۗ وَٱللَّهُ بَصِيرُۢ بِمَا يَعۡمَلُونَ ١٦٣ ﴾ [ال عمران: ١٦٢، ١٦٣]
“আল্লাহ যেটাতে সন্তুষ্ট, যে তারই অনুসরণ করে, সে কি ওর মত, যে আল্লাহর ক্রোধের পাত্র হয়েছে এবং জাহান্নামই যার আবাস? আর সেটা কত নিকৃষ্ট প্রত্যাবর্তনস্থল! আল্লাহর কাছে তারা বিভিন্ন স্তরের; তারা যা করে, আল্লাহ সেসব ভালভাবে দেখেন।”(সূরা আলে ইমরান: ১৬২ – ১৬৩)
জান্নাতীদের মর্যাদাভেদে জান্নাতের প্রকারভেদ
পবিত্র কালামে জান্নাতীদেরকে দু’ভাগ করা হয়েছে। যথা:
১) ডান দিকের লোক (২) অগ্রবর্তী লোক।
ইরশাদ হচ্ছে:
﴿ فَأَصۡحَٰبُ ٱلۡمَيۡمَنَةِ مَآ أَصۡحَٰبُ ٱلۡمَيۡمَنَةِ ٨ ﴾ [الواقعة: ٨]
‘‘অতঃপর ডান দিকের লোক। ডান দিকের লোকের (সৌভাগ্যের কথা) কি বলা যায়?’’ (সূরা ওয়াকি‘আহ্: ৮)
আরও বলা হয়েছে,
﴿ وَٱلسَّٰبِقُونَ ٱلسَّٰبِقُونَ ١٠ أُوْلَٰٓئِكَ ٱلۡمُقَرَّبُونَ ١١ ﴾ [الواقعة: ١٠، ١١]
‘‘আর অগ্রবর্তী লোকেরা তো (সকল ব্যাপারে) অগ্রবর্তীই। তারাই তো সান্নিধ্যশালী লোক।’’ (সূরা ওয়াকি‘আহ্: ১০-১১)
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন:
«إِنَّ أَهْلَ الجَنَّةِ يَتَرَاءَوْنَ أَهْلَ الغُرَفِ مِنْ فَوْقِهِمْ، كَمَا يَتَرَاءَوْنَ الكَوْكَبَ الدُّرِّيَّ الغَابِرَ فِي الأُفُقِ، مِنَ المَشْرِقِ أَوِ المَغْرِبِ، لِتَفَاضُلِ مَا بَيْنَهُمْ» قَالُوا يَا رَسُولَ اللَّهِ تِلْكَ مَنَازِلُ الأَنْبِيَاءِ لاَ يَبْلُغُهَا غَيْرُهُمْ، قَالَ: «بَلَى وَالَّذِي نَفْسِي بِيَدِهِ، رِجَالٌ آمَنُوا بِاللَّهِ وَصَدَّقُوا المُرْسَلِينَ»
‘‘জান্নাতীরা তাদের উপরতলার লোকদেরকে এমনভাবে দেখতে পাবে, যেমন করে তোমরা পূর্ব অথবা পশ্চিম দিগন্তে উজ্জ্বল তারকাগুলো দেখতে পাও। তাদের পরস্পর মর্যাদা পার্থক্যের কারণে এরূপ হবে।’’ সাহাবীগণ জিজ্ঞেস করলেন: ‘‘ইয়া রাসূলুল্লাহ! ঐ স্তরগুলো কি নবীদের যা অন্য কেউ লাভ করতে পারবে না? তিনি বললেন: ‘‘কেন পারবে না! সেই সত্তার শপথ, যার হাতে আমার প্রাণ। যারা আল্লাহর উপর ঈমান এনেছে এবং নবীদেরকে সত্য বলে মেনে নিয়েছে, তারা ঐ স্তরে যেতে সক্ষম হবে।’’ (বুখারী, ৩২৫৬, মুসলিম, ২৮৩১)
অত্র হাদীস থেকে স্পষ্ট জানা যায় যে, জান্নাতীদের আমলের তারতম্যের কারণে সেখানে তাদের মর্যাদাও বিভিন্ন রকম হবে। অনেক হাদীসে জান্নাতীদের নেয়ামতের বর্ণনা দিতে গিয়ে বলা হয়েছে নিম্নমানের এক জান্নাতীকে অমুক অমুক বস্তু দেয়া হবে। এতে স্পষ্ট প্রতীয়মান হয় যে জান্নাতীদেরকে আল্লাহ তাদের আমল ও মর্যাদা অনুযায়ী বিভিন্ন মানের জান্নাত দেবেন।
এ থেকে আরও বুঝা যায় যে, কুরআন ও হাদীসে জান্নাতের যে আলোচনা করা হয়েছে তা সাধাণভাবে সকল জান্নাতীদের জন্য প্রযোজ্য। কিন্তু যারা আল্লাহর প্রিয় ও সালেহ বান্দাহ তাদেরকে এর অতিরিক্ত আরও কিছু দেবেন তার বর্ণনা আল্লাহ কোথাও করেন নি। শুধু ইঙ্গিত দেয়াই যথেষ্ট মনে করেছেন।
জান্নাতীদের উষ্ণ সম্বর্ধনা
আল্লাহ বলেন,
﴿وَسِيقَ ٱلَّذِينَ ٱتَّقَوۡاْ رَبَّهُمۡ إِلَى ٱلۡجَنَّةِ زُمَرًاۖ حَتَّىٰٓ إِذَا جَآءُوهَا وَفُتِحَتۡ أَبۡوَٰبُهَا وَقَالَ لَهُمۡ خَزَنَتُهَا سَلَٰمٌ عَلَيۡكُمۡ طِبۡتُمۡ فَٱدۡخُلُوهَا خَٰلِدِينَ ٧٣ وَقَالُواْ ٱلۡحَمۡدُ لِلَّهِ ٱلَّذِي صَدَقَنَا وَعۡدَهُۥ وَأَوۡرَثَنَا ٱلۡأَرۡضَ نَتَبَوَّأُ مِنَ ٱلۡجَنَّةِ حَيۡثُ نَشَآءُۖ فَنِعۡمَ أَجۡرُ ٱلۡعَٰمِلِينَ ٧٤﴾ [الزمر: ٧٣، ٧٤]
“মোত্তাকীদেরকে দলে দলে জান্নাতের দিকে নিয়ে যাওয়া হবে। যখন তারা মুক্ত দরজা দিয়ে জান্নাতে পৌছাবে, জান্নাতের রক্ষীরা তাদেরকে এ বলে অভ্যর্থনা জানাবে, তোমাদের প্রতি সালাম, শুভেচ্ছা, তোমরা সুখে থাকো এবং সর্বদা বসবাসের জন্য তোমরা জান্নাতে প্রবেশ করো। তারা বলবে, সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর যিনি আমাদের প্রতি তাঁর ওয়াদা পূর্ণ করেছেন এবং আমাদেরকে এ ভূমির উত্তরাধিকারী বানিয়েছেন। আমরা জান্নাতের যেখানে ইচ্ছা বসবাস করবো। মেহনতকারীদের পুরস্কার কতই না চমৎকার।” (সূরা যুমার: ৭৩-৭৪)
বহুতল ভবন ও নির্ঝরিণী
জান্নাতীদের বাসস্থান সম্পর্কে আল্লাহ বলেন:
﴿لَٰكِنِ ٱلَّذِينَ ٱتَّقَوۡاْ رَبَّهُمۡ لَهُمۡ غُرَفٞ مِّن فَوۡقِهَا غُرَف مَّبۡنِيَّةٞ تَجۡرِي مِن تَحۡتِهَا ٱلۡأَنۡهَٰرُۖ وَعۡدَ ٱللَّهِ لَا يُخۡلِفُ ٱللَّهُ ٱلۡمِيعَادَ ٢٠﴾ [الزمر: ٢٠]ٞ
“যারা মোত্তাকী, তাদের জন্য রয়েছে কক্ষের উপর কক্ষ (বহুতল ভবন) এবং এর নীচে নির্ঝরিণী প্রবাহিত। আল্লাহ নিজ ওয়াদা কখনও ভঙ্গ করেন না।” (সূরা যুমার: ২০)
সকল প্রকার মজাদার খাবার ডিশ ও ফল-ফলাদি
আল্লাহ বলেন,
﴿يَٰعِبَادِ لَا خَوۡفٌ عَلَيۡكُمُ ٱلۡيَوۡمَ وَلَآ أَنتُمۡ تَحۡزَنُونَ ٦٨ ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ بَِٔايَٰتِنَا وَكَانُواْ مُسۡلِمِينَ ٦٩ ٱدۡخُلُواْ ٱلۡجَنَّةَ أَنتُمۡ وَأَزۡوَٰجُكُمۡ تُحۡبَرُونَ ٧٠ يُطَافُ عَلَيۡهِم بِصِحَافٖ مِّن ذَهَبٖ وَأَكۡوَابٖۖ وَفِيهَا مَا تَشۡتَهِيهِ ٱلۡأَنفُسُ وَتَلَذُّ ٱلۡأَعۡيُنُۖ وَأَنتُمۡ فِيهَا خَٰلِدُونَ ٧١ وَتِلۡكَ ٱلۡجَنَّةُ ٱلَّتِيٓ أُورِثۡتُمُوهَا بِمَا كُنتُمۡ تَعۡمَلُونَ ٧٢ لَكُمۡ فِيهَا فَٰكِهَةٞ كَثِيرَةٞ مِّنۡهَا تَأۡكُلُونَ ٧٣ ﴾ [الزخرف: ٦٨، ٧٣]
“হে আমার বান্দাগণ, তোমাদের আজ কোনো ভয় নেই এবং তোমরা দুঃখিত ও পেরেশান হবে না। তোমরা আমার আয়াতসমূহের বিশ্বাস স্থাপন করেছিলে এবং তোমরা আমার আজ্ঞাবহ ছিল। জান্নাতে প্রবেশ করো তোমরা এবং তোমাদের বিবিগণ সানন্দে। তাদের কাছে সোনার তৈরি ডিশ ও পানপাত্র পেশ করা হবে এবং সেখানে রয়েছে মন যা চায় এবং নয়ন যাতে তৃপ্ত হয়। তোমরা সেখানে চিরকাল থাকবে। এই যে জান্নাতের তোমরা উত্তরাধিকারী হয়েছো, এটা তোমাদের কর্মের ফল। সেখানে তোমাদের জন্য আছে প্রচুর ফল-মূল, তা থেকে তোমরা খাবে।” (সূরা যুমার: ৬৮-৭৩)
জান্নাতে সকল প্রকার ফল-মূল পাওয়া যাবে তারা দাঁড়িয়ে, বসে ও শুয়ে যখনই ইচ্ছা করবে, তখনই খেতে পারবে।
যা পেতে ইচ্ছে করবে তাই পাবে
পৃথিবীতে কোন জিনিস পেতে হলে বা ভোগ করতে চাইলে সে জিনিসের জন্য চেষ্টা শ্রম ও কোন কোন ক্ষেত্রে টাকা বা সম্পদের প্রয়োজন হয়। কিন্তু জান্নাতে ইচ্ছে হওয়া মাত্রই সে জিনিস তার সামনে উপস্থিত পাবে। এ ব্যাপারে আল্লাহ সাক্ষ্য দিচ্ছেনঃ
﴿وَلَكُمۡ فِيهَا مَا تَشۡتَهِيٓ أَنفُسُكُمۡ وَلَكُمۡ فِيهَا مَا تَدَّعُونَ ٣١ نُزُلٗا مِّنۡ غَفُورٖ رَّحِيمٖ ٣٢ ﴾ [فصلت: ٣١، ٣٢]
অর্থঃ ‘সেখানে তোমরা যা কিছু চাও এবং যা ইচ্ছে করবে সাথে সাথে তাই হবে। এটা হচ্ছে ক্ষমাশীল ও দয়াবান আল্লাহর তরফ হতে মেহমানদারী।’ (সূরা হা-মীম আস-সিজদা: ৩০-৩১)
অন্যত্র বলা হয়েছেঃ
﴿ وَأَمۡدَدۡنَٰهُم بِفَٰكِهَةٖ وَلَحۡمٖ مِّمَّا يَشۡتَهُونَ ٢٢ ﴾ [الطور: ٢٢]
“এবং আমি জান্নাতীদেরকে তাদের ইচ্ছানুযায়ী ফল ও গোশত প্রদান করতে থাকবো।’ (সূরা আত-তূর: ২২)
এ দান স্থান ও কালের সাথে সীমাবদ্ধ হবে না, নিয়মিতভাবে চিরদিন প্রদান করা হবে। যেমন আল্লাহ বলেনঃ
﴿ وَلَهُمۡ رِزۡقُهُمۡ فِيهَا بُكۡرَةٗ وَعَشِيّٗا ٦٢ ﴾ [مريم: ٦٢]
অর্থঃ ‘এবং সেখানে তাদেরকে (নিয়মিতভাবে) সকাল সন্ধ্যা খাদ্য পরিবেশন করা হবে।’ (সূরা মারইয়াম: ৬২)
অসীম সুখ-সম্ভার কোনোদিন শেষ হবে না
পৃথিবীতে যদিও কোনো ব্যাক্তি সম্পূর্ণ সুখ-সম্ভোগ লাভ করতে পারে না; তবুও যতোটুকু পায় তার মধ্যে প্রতিটি মুহূর্ত ভীত সন্ত্রস্ত থাকে চোর-ডাকাত, প্রতারক এবং মৃত্যুর ভয়ে। কিন্তু জান্নাতের নিয়ামত এবং সুখ ভোগ কোনো দিনই কমতি বা শেষ হবে না।
আল্লাহ বলেনঃ
﴿فِي سِدۡرٖ مَّخۡضُودٖ ٢٨ وَطَلۡحٖ مَّنضُودٖ ٢٩ وَظِلّٖ مَّمۡدُودٖ ٣٠﴾ [الواقعة: ٢٨، ٣٠]
অর্থঃ ‘তাদের জন্য কাটাবৃক্ষসমূহ, থরে থরে সাজানো কলা, বিস্তীর্ণ অঞ্চলব্যাপী ছায়া, সর্বদা প্রবাহমান পানি, আর খুব প্রচুর পরিমাণ ফল থাকবে। যা কোনদিন শেষ হবে না এবং ভোগ করতে কোন বাঁধা-বিপত্তিও থাকবে না।’ (সূরা ওয়াকি‘আহ্: ২৮-৩০)
অন্যত্র বলা হয়েছেঃ
﴿ جَنَّٰتِ عَدۡنٖ مُّفَتَّحَةٗ لَّهُمُ ٱلۡأَبۡوَٰبُ ٥٠ مُتَّكِِٔينَ فِيهَا يَدۡعُونَ فِيهَا بِفَٰكِهَةٖ كَثِيرَةٖ وَشَرَابٖ ٥١ ۞وَعِندَهُمۡ قَٰصِرَٰتُ ٱلطَّرۡفِ أَتۡرَابٌ ٥٢ هَٰذَا مَا تُوعَدُونَ لِيَوۡمِ ٱلۡحِسَابِ ٥٣ إِنَّ هَٰذَا لَرِزۡقُنَا مَا لَهُۥ مِن نَّفَادٍ ٥٤ ﴾ [ص: ٥٠، ٥٤]
অর্থঃ ‘চিরস্থায়ী জান্নাতসমূহ যার দ্বারগুলো তাদের জন্য উন্মুক্ত হয়ে থাকবে। সেখানে তারা ঠেস দিয়ে বসবে এবং প্রচুর ফল ও পানীয় চেয়ে পাঠাবে, আর তাদের নিকট লজ্জাবনত সমবয়স্কা স্ত্রী থাকবে। এ জিনিসগুলো এমন যা হিসেবের দিন দান করার জন্য তোমাদের নিকট ওয়াদা করা হয়েছে। এটা আমাদের দেয়া রিযিক, কোনো দিন শেষ হয়ে যাবে না।’ (সূরা সদ: ৫০-৫৪)
জান্নাতীদেরকে আল্লাহ পবিত্রা স্ত্রী ও হুরদের সাথে বিয়ে দেবেন
মহান আল্লাহ বলেনঃ
﴿ مُتَّكِِٔينَ عَلَىٰ سُرُرٖ مَّصۡفُوفَةٖۖ وَزَوَّجۡنَٰهُم بِحُورٍ عِينٖ ٢٠ ﴾ [الطور: ٢٠]
অর্থঃ ‘তারা সামনা-সামনিভাবে সাজানো সারি সারি আসনের উপর ঠেস দিয়ে বসে থাকবে এবং আমি তাদের সাথে সুনয়না হুরদের বিবাহ দেবো।’ (সূরা তুর: ২০)
حور বহুবচনের শব্দ। একবচনে حوراء অর্থ অত্যন্ত সুশ্রী, অনিন্দ্য সুন্দর। عين শব্দটিও বহুবচন। একবচনে عيناء অর্থ ভাসা ভাসা ডাগর চক্ষুওয়ালা নারী। যাদেরকে বাংলা সাহিত্যের ভাষায় হরিণ নয়না বলা হয়। হুর সম্বন্ধে ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে মুফাচ্ছিরগণ দু’ভাগে ভাগ করেছেন, এক দলের মতেঃ সম্ভবত এরা হবে সেসব মেয়ে যারা বালেগা হওয়ার পূর্বেই মৃত্যুবরণ করেছিলো এবং যাদের পিতা-মাতা জান্নাতে যাওয়ার যোগ্য হয় নি। সে সব মেয়েদেরকে ষোড়শী যুবতী করে হুরে রূপান্তর করা হবে। আর তারা চিরদিন নব্য যুবতীই থেকে যাবে।
অন্যদের মতেঃ হুরগণ প্রকৃতপক্ষে স্ত্রী জাতি কিন্তু তাদের সৃষ্টি মানব সৃষ্টির চেয়ে আলাদা এবং আল্লাহ রাব্বুল ‘আলামীন আপন মহিমায় তাদেরকে সৃষ্টি করেছেন।
অন্যত্র বলা হয়েছেঃ
﴿ فِيهِنَّ خَيۡرَٰتٌ حِسَانٞ ٧٠ ﴾ [الرحمن: ٧٠]
অর্থঃ ‘(এসব নিয়ামতের মধ্যে থাকবে) তাদের জন্য সচ্চরিত্রবান ও সুদর্শন স্ত্রীগণ।’ (সূরা আর-রাহমান: ৭০)
সূরা আল-ইমরানে বলা হয়েছেঃ
﴿ لِلَّذِينَ ٱتَّقَوۡاْ عِندَ رَبِّهِمۡ جَنَّٰتٞ تَجۡرِي مِن تَحۡتِهَا ٱلۡأَنۡهَٰرُ خَٰلِدِينَ فِيهَا وَأَزۡوَٰجٞ مُّطَهَّرَةٞ وَرِضۡوَٰنٞ مِّنَ ٱللَّهِۗ وَٱللَّهُ بَصِيرُۢ بِٱلۡعِبَادِ ١٥ ﴾ [ال عمران: ١٥]
অর্থঃ ‘যারা আল্লাহকে ভয় করে তাদের প্রতিপালকের নিকট তাদের জন্য এমন উদ্যান সমূহ রয়েছে যার নীচ দিয়ে ঝর্ণাধারা প্রবাহমান। আর সেখানে তারা চিরকাল অবস্থান করবে। সেখানে তাদের জন্য আরও আছে পবিত্রা স্ত্রীগণ ও আল্লাহর সন্তুষ্টি।
জান্নাতী হুরেরা হবে কুমারী
আল্লাহ বলেন,
﴿إِنَّآ أَنشَأۡنَٰهُنَّ إِنشَآءٗ ٣٥ فَجَعَلۡنَٰهُنَّ أَبۡكَارًا ٣٦ عُرُبًا أَتۡرَابٗا ٣٧﴾ [الواقعة: ٣٥، ٣٧]
“আমি জান্নাতী নারীদেরকে বিশেষরূপে সৃষ্টি করেছি। তারপর তাদেরকে চিরকুমারী, কামিনী ও সমবয়স্কা বানিয়েছি।” (সূরা ওয়াকি‘আহ্: ৩৫-৩৮)
ঐ সমস্ত হুর এবং স্ত্রীগণ শুধু কুমারীই হবে না বরং এমন অবস্থায় থাকবে যে, জান্নাতীদের স্পর্শের পূর্বে কোনো মানুষ অথবা জ্বীন তাদেরকে স্পর্শ করে নি বা দেখেও নি। কেননা বিচারের পূর্বে কোনো ব্যক্তিই জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না তাই তাদেরকে দেখা বা স্পর্শ করাও সম্ভব নয়।
আল্লাহ রাব্বুল ‘আলামীন নিজেই বলেনঃ
﴿ لَمۡ يَطۡمِثۡهُنَّ إِنسٞ قَبۡلَهُمۡ وَلَا جَآنّٞ ٧٤ ﴾ [الرحمن: ٧٤]
অর্থঃ তাদেরকে (জান্নাতীদের) পূর্বে কোনো মানুষ অথবা জ্বীন স্পর্শ করে নি।’ (সূরা আর-রাহমান: ৫৬)
হুরেরা হবে আবরণে রক্ষিত উজ্জ্বল মণি-মুক্তার মতো সুন্দরী
আল্লাহ বলেন:
﴿ وَحُورٌ عِينٞ ٢٢ كَأَمۡثَٰلِ ٱللُّؤۡلُوِٕ ٱلۡمَكۡنُونِ ٢٣ ﴾ [الواقعة: ٢٢، ٢٣]
“হুরের উদাহরণ হলো, আবরণে রক্ষিত মুক্তার মতো সুন্দর ও উজ্জ্বল এবং আয়তলোচনা। ”(সূরা ওয়াকি‘আহ্: ২৩)
আল্লাহ আরো বলেন,
﴿وَعِندَهُمۡ قَٰصِرَٰتُ ٱلطَّرۡفِ عِينٞ ٤٨ كَأَنَّهُنَّ بَيۡضٞ مَّكۡنُونٞ ٤٩﴾ [الصافات: ٤٨، ٤٩]
“তাদের চোখ সর্বদাই অবনত (পবিত্রা যারা অন্যের দিকে তাকায় না), সুন্দর চোখ বিশিষ্ট এবং তারা যেন ডিমের আবরণের ভেতর সুপ্ত উজ্জ্বল।” (সূরা সাফ্ফাত:৪৮- ৪৯)
আনাস ইবন মালেক রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন
«وَلَوْ أَنَّ امْرَأَةً مِنْ أَهْلِ الجَنَّةِ اطَّلَعَتْ إِلَى أَهْلِ الأَرْضِ لَأَضَاءَتْ مَا بَيْنَهُمَا، وَلَمَلَأَتْهُ رِيحًا، وَلَنَصِيفُهَا عَلَى رَأْسِهَا خَيْرٌ مِنَ الدُّنْيَا وَمَا فِيهَا»
‘জান্নাতীগণের স্ত্রীদের মধ্যে থেকে কোনো একজন স্ত্রী যদি পৃথিবীর দিকে উঁকি মেরো দেখতো তবে আসমান ও জমিনের মধ্যবর্তী সবকিছু আলোকিত হয়ে যেতো এবং গোটা পৃথিবী সুগন্ধে ভরে যেতো। তার মাথার উড়নাটিও পৃথিবী এবং পৃথিবীর সমস্ত বস্তুর চেয়ে দামী।’ (বুখারী, ২৭৯৬)
অন্য বর্ণনায় এসেছে, হুরেরা অত্যন্ত উজ্জ্বল সুন্দরী, রূপবতী, লাবণ্যময়ী, সুন্দর ও বড় বড় চোখের অধিকারিণী হবে, কাপড়ের মধ্য দিয়ে তাদের হাড়ের ভেতরের মজ্জা দেখা যাবে, তাদের দেহ আয়নার মতো স্বচ্ছ হবে এবং যে কেউ নিজের চেহারা তাতে দেখতে পাবে।
আনাস ইবন মালেক থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: মোমিনকে জান্নাতে ১শত নারীর সাথে যৌনমিলনের শক্তি দেয়া হবে। (মুসনাদে আহমাদ, ৪/৩৭১)
অন্য বর্ণনায় আছেঃ
«إِنَّ أَوَّلَ زُمْرَةٍ يَدْخُلُونَ الجَنَّةَ يَوْمَ القِيَامَةِ ضَوْءُ وُجُوهِهِمْ عَلَى مِثْلِ ضَوْءِ القَمَرِ لَيْلَةَ البَدْرِ، وَالزُّمْرَةُ الثَّانِيَةُ عَلَى مِثْلِ أَحْسَنِ كَوْكَبٍ دُرِّيٍّ فِي السَّمَاءِ، لِكُلِّ رَجُلٍ مِنْهُمْ زَوْجَتَانِ عَلَى كُلِّ زَوْجَةٍ سَبْعُونَ حُلَّةً يُرَى مُخُّ سَاقِهَا مِنْ وَرَائِهَا»
“প্রথম যারা কিয়ামতের দিন জান্নাতে যাবে, তাদের চেহারা পূর্ণিমার চাঁদের মত উজ্জ্বল দেখা যাবে, আর দ্বিতীয় দল, তারা যেন সৌন্দর্যে আকাশের ধ্রুব তারা, তাদের প্রত্যেকের জন্য থাকবে দু’জন স্ত্রী, প্রত্যেক স্ত্রীর উপর থাকবে সত্তরটি কাপড়, তথাপি তার ভেতর থেকেও পায়ের নলার ভিতরের মগজ দৃষ্টিগোচর হবে।” (তিরমিযী, ২৫৩৫)
সোনার খাটে মুখোমুখি হয়ে হেলান দিয়ে বসবে
﴿عَلَىٰ سُرُرٖ مَّوۡضُونَةٖ ١٥ مُّتَّكِِٔينَ عَلَيۡهَا مُتَقَٰبِلِينَ ١٦﴾ [الواقعة:١٥، ١٦]
“জান্নাতীরা সোনার খাটে পরস্পর মুখোমুখি হয়ে হেলান দিয়ে আরামের সাথে আলাপচারিতা করবে।” (সূরা ওয়াকি‘আহ্ : ১৫-১৬)
আল্লাহ বলেন:
﴿هُمۡ وَأَزۡوَٰجُهُمۡ فِي ظِلَٰلٍ عَلَى ٱلۡأَرَآئِكِ مُتَّكُِٔونَ ٥٦ ﴾ [يس: ٥٦]
“তারা এবং তাদের স্ত্রীরা ছায়ার মধ্যে খাটে হেলান দিয়ে বসবে। সেখানে তাদের জন্য রয়েছে ফল-মুল এবং তারা যা চাবে সবই ।” সূরা ইয়াসিন-৫৬)
হুরদের প্রাণ মাতানো সংগীত
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, জান্নাতের মধ্যে হুরদের একটি সমষ্টি থাকবে, যারা এমন মধুর সুরে গান গাবে, আল্লাহর কোন সৃষ্টি এত সুন্দর কণ্ঠের গান আর কোনো দিন শোনে নি। তারা এ বলে গাইবে:
‘আমরা চিরস্থায়ী, কোন দিন খতম হবো না,
আমরা চিরসুখী, কোনদিন দুঃখী হবো না।
আমরা চিরসন্তুষ্ট, কোন দিন অসন্তুষ্ট হবো না,
সুসংবাদ, আমরা যাদের জন্য এবং যারা আমাদের জন্য। (তিরমিযী, ২৫৬৪)[2]
আবু হোরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহুকে জান্নাতী গানের ধরণ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করায় তিনি উত্তর দেন: সে সকল গান হবে আল্লাহর হামদ ও গুণ-কীর্তন, প্রশংসা ও স্তুতি।
জান্নাতীদের খেদমতের জন্য অসংখ্য গিলমান থাকবে
জান্নাতীদের জন্য হুরের পাশাপাশি গিলমান (غلمان) থাকবে। غلمان বহুবচন, এক বচনে غلام অর্থ দাস, সেবক ইত্যাদি।
মহান আল্লাহ বলেনঃ
﴿ ۞وَيَطُوفُ عَلَيۡهِمۡ غِلۡمَانٞ لَّهُمۡ كَأَنَّهُمۡ لُؤۡلُؤٞ مَّكۡنُونٞ ٢٤ ﴾ [الطور: ٢٤]
“আর তাদের (সেবা যত্নে) কাজে নিযুক্ত থাকবে এমন সুন্দর সুশ্রী বালক, তারা যেন (ঝিনুকে) লুকিয়ে থাকা মুক্ত।” (সূরা তুর: ২৪)
غلمان বা সেবকগণ হবে চিরন্তন বালক। এদের বয়স কোনোদিনই বাড়বে না। এই সেইসব বালক যারা বালেগ হওয়ার আগেই মৃত্যুবরণ করেছে এবং তাদের বাবা-মা চিরস্থায়ী জাহান্নামী হবে। অথবা তারা হবে এক নতুন সৃষ্টি যাদেরকে আল্লাহ আপন মহিমায় জান্নাতীদের পরিচর্যা ও সেবার জন্য সৃষ্টি করবেন। (আল্লাহই সর্বজ্ঞ)। ঐ বালকগণ জান্নাতীদেরকে বাসন-কোসন, খাদ্য-পানীয় ইত্যাদি পরিবেশনের দায়িত্ব নিয়োজিত থাকবে এবং তারা পুরুষ ও মহিলা উভয় ধরনের জান্নাতীদের নিকট অবাধে যাতায়াত করবে।
অন্যত্র বলা হয়েছে:
﴿ ۞وَيَطُوفُ عَلَيۡهِمۡ وِلۡدَٰنٞ مُّخَلَّدُونَ إِذَا رَأَيۡتَهُمۡ حَسِبۡتَهُمۡ لُؤۡلُؤٗا مَّنثُورٗا ١٩ ﴾ [الانسان: ١٩]
‘‘আর তাদের (সেবার জন্য) নির্ধারিত থাকবে এমন সব বালক যারা চিরদিনই বালক থাকবে। আপনি তাদেরকে দেখলে মনে করবেন এরা যেন ছড়িয়ে দেয়া মুক্তা।’’ (সূরা দাহর: ১৯)
কচিকাঁচা ছোট শিশুদের আপ্যায়ন
শিশুরা আনন্দের খোরাক। তাদের কচিকাঁচা চালন-চলন মনোহর। যদি তারাই আপ্যায়ন করায় তাহলে তা আরো কত বেশি আনন্দঘন হবে! আল্লাহ বলেন:
﴿ يَطُوفُ عَلَيۡهِمۡ وِلۡدَٰنٞ مُّخَلَّدُونَ ١٧ بِأَكۡوَابٖ وَأَبَارِيقَ وَكَأۡسٖ مِّن مَّعِينٖ ١٨ لَّا يُصَدَّعُونَ عَنۡهَا وَلَا يُنزِفُونَ ١٩ وَفَٰكِهَةٖ مِّمَّا يَتَخَيَّرُونَ ٢٠ وَلَحۡمِ طَيۡرٖ مِّمَّا يَشۡتَهُونَ ٢١ ﴾ [الواقعة: ١٧، ٢١]
“তাদের কাছে পানপাত্র ও সূরাপূর্ণ পেয়ালা হাতে কচি-কোমল শিশুরা ঘোরাফেরা করবে। আর যা পান করলে মাথা ব্যাথা হবে না এবং বিকারগ্রস্থ হবে না। আর তাদের পছন্দসই ফল-মুল ও রুচিসম্মত পাখীর গোশত নিয়ে আপ্যায়নের জন্য ঘোরাফেরা করবে।” (সূরা ওয়াকি‘আহ্: ১৭-২১)
জান্নাতীদের দৈহিক গঠন
রাসূল আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«يَدْخُلُ أَهْلُ الجَنَّةِ الجَنَّةَ جُرْدًا مُرْدًا مُكَحَّلِينَ أَبْنَاءَ ثَلَاثِينَ أَوْ ثَلَاثٍ وَثَلَاثِينَ سَنَةً»
‘‘জান্নাতীরা জান্নাতে প্রবেশ করবে, তারা থাকবে লোম ও দাড়ি গোঁফ বিহীন, খৎনাবিহীন, সুরমা লাগানো, ত্রিশ অথবা তেত্রিশ বছরের বয়সের।’’ (তিরমিযী, ২৫৪৫)
অন্য হাদীসে বলা হয়েছে:
«أهل الجنة جرد مرد كحل لايفنى شبابهم ولا يبلى ثيابهم»
‘‘জান্নাতীগণ লোম ও দাড়ি গোঁফ বিহীন হবে, তাদের চোখ থাকবে সুরমায়িত। তাদের যৌবন কোনদিনই বিলুপ্ত হবে না এবং তাদের কাপড় চোপড়ও পুরানো হবে না।’’ (তিরমিযী, ২৫৩৯)
হাসান বসরী রহ. বলেন,
أَتَتْ عَجُوزٌ إِلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم َ فَقَالَتْ: يَا رَسُولَ اللَّهِ ادْعُ اللَّهَ أَنْ يُدْخِلَنِي الْجَنَّةَ. فَقَالَ: (يَا أُمَّ فُلَانٍ إِنَّ الْجَنَّةَ لَا تَدْخُلُهَا عَجُوزٌ) . قَالَ: فَوَلَّتْ تَبْكِي. فَقَالَ: (أَخْبِرُوهَا أَنَّهَا لَا تَدْخُلُهَا وَهِيَ عَجُوزٌ إِنَّ اللَّهَ تَعَالَى يَقُولُ: إِنَّا أَنْشَأْنَاهُنَّ إِنْشَاءً. فَجَعَلْنَاهُنَّ أبكارا. عربا أترابا)
একবার রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নিকট এক বৃদ্ধা আবেদন করলেন: ‘‘হে আল্লাহর রাসূল! আপনি দু’আ করে দিন আমি যেনো জান্নাতে যেতে পারি।’’ রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: কোন বৃদ্ধা জান্নাতে যাবে না। একথা শুনে বৃদ্ধা কাঁদতে লাগলেন। তখন তিনি তাকে ডেকে বললেন: বুড়ি শোনো, তুমি যখন জান্নাতে যাবে তখন আর বুড়ি থাকবে না। ষোড়ষী যুবতী হয়েই জান্নাতে প্রবেশ করবে। একথা শুনে বৃদ্ধা খুশী হয়ে চলে গেলো। [শামায়েলে তিরমিযী, বর্ণনা নং ২০৫, শাইখ আল-আলবানী বর্ণনাটিকে হাসান বলেছেন]
জান্নাতের নদী ও ঝর্ণাসমূহ
জান্নাতে মোট চার ধরনের নদী প্রবাহিত হবে।
(১) পানি (২) দু্ধ (৩) মধু (৪) শরাব। তন্মধ্যে পানি, তার ঝর্ণাসমূহ হচ্ছে,
1) ‘কাফুর’ নামক ঝর্ণা। এর পানি সুঘ্রাণ এবং সুশীতল।
2) সালসাবিল ঝর্ণা। এর পানি ফুটন্ত চা ও কপির ন্যায় সুগন্ধি ও উত্তপ্ত থাকবে।
3) তাছনীম নাম ঝর্ণা। এর পানি থাকবে নাতিশীতোষ্ণ।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿ وَبَشِّرِ ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ وَعَمِلُواْ ٱلصَّٰلِحَٰتِ أَنَّ لَهُمۡ جَنَّٰتٖ تَجۡرِي مِن تَحۡتِهَا ٱلۡأَنۡهَٰرُۖ ﴾ [البقرة: ٢٥]
“আর যারা ঈমান এনেছে এবং সৎকাজ করেছে তাদেরকে শুভ সংবাদ দিন যে, তাদের জন্য রয়েছে জান্নাত, যার তলদেশে নদী প্রবাহিত।” (আল বাকারা:২৫)
আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন:
﴿ مَّثَلُ ٱلۡجَنَّةِ ٱلَّتِي وُعِدَ ٱلۡمُتَّقُونَۖ فِيهَآ أَنۡهَٰرٞ مّن مَّآءٍ غَيۡرِ ءَاسِنٖ وَأَنۡهَٰرٞ مِّن لَّبَنٖ لَّمۡ يَتَغَيَّرۡ طَعۡمُهُۥ وَأَنۡهَٰرٞ مِّنۡ خَمۡرٖ لَّذَّةٖ لِّلشَّٰرِبِينَ وَأَنۡهَٰرٞ مِّنۡ عَسَلٖ مُّصَفّٗىۖ وَلَهُمۡ فِيهَا مِن كُلِّ ٱلثَّمَرَٰتِ ﴾ [محمد: ١٥]
“মুত্তাকীদেরকে যে জান্নাতের প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছে তার দৃষ্টান্ত: তাতে আছে নির্মল পানির নহরসমূহ, আছে দুধের নহরসমূহ যার স্বাদ অপরিবর্তনীয়, আছে পানকারীদের জন্য সুস্বাদু সুরার নহরসমূহ, আছে পরিশোধিত মধুর নহরসমূহ এবং সেখানে তাদের জন্য থাকবে প্রত্যেক প্রকারের ফলমূল।”(মুহাম্মদ:১৫)
আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন:
﴿ إِنَّ ٱلۡمُتَّقِينَ فِي مَقَامٍ أَمِينٖ ٥١ فِي جَنَّٰتٖ وَعُيُونٖ ٥٢ ﴾ [الدخان: ٥١، ٥٢]
“নিশ্চয় মুত্তাকীরা থাকবে নিরাপদ স্থানে— উদ্যান ও ঝর্ণার মাঝে।”(আদ দুখান:৫১-৫২)
আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন:
﴿ فِيهِمَا عَيۡنَانِ تَجۡرِيَانِ ٥٠ ﴾ [الرحمن: ٥٠]
“উভয় উদ্যানে রয়েছে প্রবাহমান দুই প্রস্রবণ।”(আর রাহমান:৫০)
আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন:
﴿ فِيهِمَا عَيۡنَانِ نَضَّاخَتَانِ ٦٦ ﴾ [الرحمن: ٦٦]
“উভয় উদ্যানে আছে উচ্ছলিত দুই প্রস্রবণ।” (আর রাহমান:২২)
সূরা যারিয়াতে বলা হয়েছে:
﴿ إِنَّ ٱلۡمُتَّقِينَ فِي جَنَّٰتٖ وَعُيُونٍ ١٥ ءَاخِذِينَ مَآ ءَاتَىٰهُمۡ رَبُّهُمۡۚ إِنَّهُمۡ كَانُواْ قَبۡلَ ذَٰلِكَ مُحۡسِنِينَ ١٦ ﴾ [الذاريات: ١٥، ١٦]
‘‘অবশ্য মুক্তাকী লোকেরা সেদিন বাগ-বাগিচা ও ঝর্ণাধারাসমূহের পরিবেষ্টনে অবস্থান থাকবে। তাদের রব তাদেরকে যা দেবে সানন্দে তারা তা গ্রহণ করতে থাকবে। (এটা এজন্য যে) তারা এর আগে মুহসিন (সদাচারী) বান্দা হিসেবে পরিচিত ছিলো।’’ (সূরা যারিয়াত: ১৫-১৬)
বাগানসমূহের নিচ দিয়ে প্রবাহের অর্থ হচ্ছে, বাগানসমূহের পাশ দিয়ে নদী নালা প্রবাহমান থাকবে। কেননা- বাগ-বাগিচা যদিও নদীর কিনারে হয় তবু তা নদী থেকে একটু উচু জায়গাই হয়ে থাকে এবং নদী ও বাগান থেকে সামান্য নিচু নিয়েই প্রবাহিত হয়।
পক্ষান্তরে যে সমস্ত জায়গায় ঝর্ণার কথা বলা হয়েছে সেখানে বাগান এবং ঝর্ণা একত্রে থাকবে একথাই বলা হয়েছে। আমরা জানি বাগানের মধ্যে বা একই সমতলে ঝর্ণা থাকা সম্ভব। শুধু সম্ভবই নয় বাগানের শোভা বর্ধনের একটি অন্যতম উৎসও বটে। তাই কুরআনের ভাষায় হচ্ছে:
﴿ فِي جَنَّٰتٖ وَعُيُونٖ ٥٢ ﴾ [الدخان: ٥٢]
“সেদিন তারা বাগ-বাগিচা ও ঝর্ণাসমূহের পরিবেষ্টনে অবস্থান করবে।”
আরো বলা হয়েছে:
﴿ وَدَانِيَةً عَلَيۡهِمۡ ظِلَٰلُهَا وَذُلِّلَتۡ قُطُوفُهَا تَذۡلِيلٗا ١٤ ﴾ [الانسان: ١٤]
‘‘জান্নাতের ছায়া তাদের উপর বিস্তৃত হয়ে থাকবে এবং তার ফলসমূহ সর্বদা আয়ত্বের মধ্যে থাকবে।’’ (সূরা দাহর: ১৪)
একই জায়গায় নানা ধরনের ফুল ফলের বাগান, বড় বড় ছায়াদার বৃক্ষরাজি, ঝর্ণাসমূহ, সাথে বিশাল আয়তনের অট্টালিকাসমূহ, পাশ দিয়ে প্রবাহমান নদী, একত্রে এগুলোর সমাবেশ ঘটলে পরিবেশ কত মোহিনী মনোমুগ্ধকার হতে পারে তা লিখে বা বর্ণনা করে বুঝানো কোনক্রমেই সম্ভব নয় শুধুমাত্র মনের চোখে কল্পনার ছবি দেখলে কিছুমাত্র অনুমান করা সম্ভব।
মু‘আবিয়া রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
« إن في الجنة بحر الماء , وبحر العسل , وبحر اللبن , وبحر الخمر , ثم تشقق الأنهار بعد » . ( رواه الترمذي ) .
“নিশ্চয়ই জান্নাতের মধ্যে থাকবে পানির সমুদ্র, মধুর সমুদ্র, দুধের সমুদ্র এবং মদের সমুদ্র; অতঃপর নদী-নালার ব্যবস্থা করা হবে।” [তিরিমিযী, ২৫৭১]
জান্নাতের প্রাসাদ, কক্ষ ও তাঁবুসমূহ
আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿ وَمَسَٰكِنَ طَيِّبَةٗ فِي جَنَّٰتِ عَدۡنٖۚ ﴾ [التوبة: ٧٢]
“আরও ওয়াদা দিচ্ছেন, উত্তম বাসস্থানের, স্থায়ী জান্নাতসমূহে।” [সূরা আত-তাওবাহ: ৭২]
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা আরও বলেন:
﴿ وَهُمۡ فِي ٱلۡغُرُفَٰتِ ءَامِنُونَ ٣٧ ﴾ [سبا: ٣٧]
“আর তারা সুউচ্চ প্রাসাদে নিরাপদে থাকবে।”(সূরা সাবা: ৩৭)
আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন:
﴿أُوْلَٰٓئِكَ يُجۡزَوۡنَ ٱلۡغُرۡفَةَ بِمَا صَبَرُواْ وَيُلَقَّوۡنَ فِيهَا تَحِيَّةٗ وَسَلَٰمًا ٧٥ ﴾ [الفرقان: ٧٤]
“তারাই, যাদেরকে প্রতিদান দেয়া হবে জান্নাতের সুউচ্চ কক্ষ, যেহেতু তারা ছিল ধৈর্যশীল। আর তারা প্রাপ্ত হবে সেখানে অভিবাদন ও সালাম।”(সূরা আল-ফুরকান: ৭৫)
আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন:
﴿ لَٰكِنِ ٱلَّذِينَ ٱتَّقَوۡاْ رَبَّهُمۡ لَهُمۡ غُرَفٞ مِّن فَوۡقِهَا غُرَفٞ مَّبۡنِيَّةٞ تَجۡرِي مِن تَحۡتِهَا ٱلۡأَنۡهَٰرُۖ وَعۡدَ ٱللَّهِ لَا يُخۡلِفُ ٱللَّهُ ٱلۡمِيعَادَ ٢٠ ﴾ [الزمر: ٢٠]
“তবে যারা তাদের রবের তাকওয়া অবলম্বন করে, তাদের জন্য আছে বহু প্রাসাদ যার উপর নির্মিত আরো প্রাসাদ, যার পাদদেশে নদী প্রবাহিত; এটা আল্লাহ্র প্রতিশ্রুতি, আল্লাহ্ প্রতিশ্রুতির বিপরীত করেন না।”(সূরা যুমার: ২০)
আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন:
﴿ حُورٞ مَّقۡصُورَٰتٞ فِي ٱلۡخِيَامِ ٧٢ ﴾ [الرحمن: ٧٢]
“তারা হূর, তাঁবুতে সুরক্ষিতা।” (সূরা আর-রাহমান: ৭২)
আবু মূসা আশ’আরী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: জান্নাতে মোমিনের জন্য মুক্তার তৈরি তাঁবু থাকবে। এর দৈর্ঘ্য হবে ৬০ মাইল। সেখানে মোমিনদের পরিবার থাকবে। তারা তাদের কাছে আসা-যাওয়া করবে, একে অপরকে দেখতে পারবে না। (বুখারী, ৪৮৭৯; মুসলিম, ১৮০)
তাঁবু দীর্ঘ হওয়ার কারণে সাধারণভাবে একে অপরকে দূরত্বের কারণে দেখতে পাবে না।
আনাস ইবন মালেক থেকে বর্ণিত, তিনি মিরাজের হাদীস বর্ণনা করে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বরাত দিয়ে বলেন: জিবরীল আমাকে সিদরাতুল মোনতাহা পর্যন্ত নিয়ে গেলো। এরপর অজ্ঞাত রং দ্বারা চতুর্দিক আবৃত হয়ে গেলো। পরে আমাকে জান্নাতে প্রবেশ করানো হলো। সেখানে মুক্তার তৈরি তাঁবুসমূহ রয়েছে। এগুলোর মাটি হচ্ছে মেশক।’ (বুখারী, ৩৪৯; মুসলিম, ১৬৩)
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: জান্নাতের ইট হলো সোনা ও রূপার, মাটি হলো মেশক, কংকর হলো মুক্তা ও ইয়াকুত, মাটি হলো যাফরান। যে প্রবেশ করবে সে সুখে থাকবে, দুঃখী হবে না, চিরস্থায়ী হবে, মৃত্যু বরণ করবে না, পোশাক পুরাতন হবে না এবং যৌবন শেষ হবে না। [তিরমিযী, ২৫২৬; মুসনাদে আহমাদ ২/৩০৪]
জান্নাতের বৃক্ষ ও বিহঙ্গকুল
আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿ وَأَصۡحَٰبُ ٱلۡيَمِينِ مَآ أَصۡحَٰبُ ٱلۡيَمِينِ ٢٧ فِي سِدۡرٖ مَّخۡضُودٖ ٢٨ وَطَلۡحٖ مَّنضُودٖ ٢٩ وَظِلّٖ مَّمۡدُودٖ ٣٠ وَمَآءٖ مَّسۡكُوبٖ ٣١ وَفَٰكِهَةٖ كَثِيرَةٖ ٣٢ ﴾ [الواقعة: ٢٧، ٣٢]
“আর ডান দিকের দল, কত ভাগ্যবান ডান দিকের দল! তারা থাকবে এমন উদ্যানে, যাতে আছে কাঁটাহীন কুলগাছ এবং কাঁদি ভরা কলা গাছ; আর সম্প্রসারিত ছায়া; আর সদা প্রবাহমান পানি এবং প্রচুর ফলমূল।”(সূরা আল-ওয়াকি‘আহ্: ২৭ – ৩২)
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা আরও বলেন:
﴿ وَلِمَنۡ خَافَ مَقَامَ رَبِّهِۦ جَنَّتَانِ ٤٦ فَبِأَيِّ ءَالَآءِ رَبِّكُمَا تُكَذِّبَانِ ٤٧ ذَوَاتَآ أَفۡنَانٖ ٤٨ ﴾ [الرحمن: ٤٦، ٤٨]
“আর যে তার রবের সম্মুখে উপস্থিত হওয়ার ভয় রাখে, তার জন্য রয়েছে দুটি উদ্যান। কাজেই তোমরা উভয়ে তোমাদের রবের কোন অনুগ্রহে মিথ্যারোপ করবে? উভয়ই বহু শাখা-পল্লববিশিষ্ট।”(সূরা আর-রাহমান: ৪৬ – ৪৮)
আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন:
﴿ وَمِن دُونِهِمَا جَنَّتَانِ ٦٢ فَبِأَيِّ ءَالَآءِ رَبِّكُمَا تُكَذِّبَانِ ٦٣ مُدۡهَآمَّتَانِ ٦٤ ﴾ [الرحمن: ٦٢، ٦٤]
“এ উদ্যান দুটি ছাড়া আরো দুটি উদ্যান রয়েছে। কাজেই তোমরা উভয়ে তোমাদের রবের কোন অনুগ্রহে মিথ্যারোপ করবে? ঘন সবুজ এ উদ্যান দু’টি।”(সূরা আর-রাহমান: ৬২ – ৬৪)
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা আরও বলেন:
﴿ إِنَّ ٱلۡمُتَّقِينَ فِي ظِلَٰلٖ وَعُيُونٖ ٤١ ﴾ [المرسلات: ٤١]
“নিশ্চয় মুত্তাকীরা থাকবে ছায়ায় ও প্রস্রবণ বহুল স্থানে।”(সূরা আল-মুরসালাত: ৪১)
আনাস ইবন মালেক রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
« إن في الجنة شجرة , يسير الراكب في ظلها مائة عام لا يقطعها » . إن شئتم فاقرؤوا : ﴿ وَظِلّٖ مَّمۡدُودٖ ٣٠ وَمَآءٖ مَّسۡكُوبٖ ٣١ ﴾ (رواه البخاري) .
“নিশ্চয়ই জান্নাতের মাঝে এমন একটি বৃক্ষ হবে, যার ছায়ার মাঝে একজন আরোহী একশ বছর পর্যন্ত ভ্রমণ করতে পারবে, তবুও বৃক্ষের ছায়াকে অতিক্রম করতে পারবে না। যদি তোমরা চাও, তাহলে তোমরা পাঠ কর: (আর সম্প্রসারিত ছায়া এবং সদা প্রবাহমান পানি)।”[3]’
অন্য হাদীসে বলা হয়েছে:
«ما في الجنة شجر إلا وساقها من ذهب»
‘‘জান্নাতে এমন কোন বৃক্ষ নেই যার শাখা প্রশাখা স্বর্ণের নয়।’’ (তিরমিযি, ২৫২৫)
জারীর ইবনে আব্দুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন: একদিন আমি সালমান ফারেসীর নিকট গেলাম। তিনি আলাপ আলোচনার এক পর্যায়ে ছোট একটি কাঠের টুকরো নিলেন, যা তার দু’ আঙ্গুলের মাঝে থাকার কারণে ভালোভাবে দেখা যাচ্ছিল না। তিনি বললেন: যদি তুমি জান্নাতে এতটুকু কাঠ সংগ্রহ করতে চাও তা পারবে না। আমি বললাম: তাহলে খেজুর গাছও অন্যান্য গাছপালা কোথায় যাবে। (যার কথা কুরআন ও হাদীসে উল্লেখ আছে?) তিনি বললেন: অবশ্য খেজুর ও অন্যান্য গাছপালা সেখানে থাকবে তবে তা কাঠের হবে না। বরং তা শাখা প্রশাখাগুলো মোমি ও স্বর্ণের তৈরী হবে। আর তাতে থাকবে কাঁদি কাঁদি খেজুর। (বাইহাকী; আল-বা‘ছে ওয়ান নুশূর, ১/১৯১; শু‘আবুল ঈমান, ৭৭৯৭; শাইখ আল-আলবানী সহীহুত তারগীবে সেটাকে হাসান বলেছেন)
জান্নাতে শুধু গাছ-পালা, নদী-নালা ও ঝর্ণাধারাই থাকবে না। সেখানে রং বেরং এর নানা প্রজাতির পাখীও থাকবে। তারা সারাক্ষণ কুজন কাকলীতে মুখরিত করে রাখবে।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
‘‘জান্নাতে লম্বা ঘাড় বিশিষ্ট উটের ন্যায় পাখীও আছে। যারা সর্বদা জান্নাতের বৃক্ষারাজীর মধ্যে বিচরণ করে বেড়াবে।’’ আবুবকর রাদিয়াল্লাহু আনহু শোনে আরজ করলেন: ‘‘ইয়া রাসূলাল্লাহ! তারা তো খুব আনন্দময় ও সুখময় জীবন যাপন রত।’’ রাসূলুল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: ‘‘সেগুলো ভক্ষণকারীরা সেখানে আরো উত্তম জীবন যাপন করবে।’’ একথা তিনি তিনবার বললেন। (মুসনাদে আহমদ ৩/২৩৬)
জান্নাতীদের আসবাবপত্র
﴿ وَيُطَافُ عَلَيۡهِم بَِٔانِيَةٖ مِّن فِضَّةٖ وَأَكۡوَابٖ كَانَتۡ قَوَارِيرَا۠ ١٥ قَوَارِيرَاْ مِن فِضَّةٖ قَدَّرُوهَا تَقۡدِيرٗا ١٦ ﴾ [الانسان: ١٥، ١٦]
‘‘তাদের সম্মুখে রৌপ্য নির্মিত পাত্র ও কাঁচের পেয়ালা আবর্তিত করানো হবে। সে কাঁচ যা রৌপ্য জাতীয় হবে এবং সেগুলোকে পরিমাণ মতো ভরতি করে রাখা হবে।’’ (সূরা দাহর: ১৫-১৬)
অন্যত্র বলা হয়েছে:
﴿ يُطَافُ عَلَيۡهِم بِصِحَافٖ مِّن ذَهَبٖ وَأَكۡوَابٖۖ وَفِيهَا مَا تَشۡتَهِيهِ ٱلۡأَنفُسُ وَتَلَذُّ ٱلۡأَعۡيُنُۖ وَأَنتُمۡ فِيهَا خَٰلِدُونَ ٧١ ﴾ [الزخرف: ٧١]
‘‘তাদের সামনে সোনার থালা ও পান পাত্র আবর্তিত হবে এবং মন ভুলানো ও চোখ জুড়ানো জিনিসসমূহ সেখানে বর্তমান থাকবে। তাদেরকে বলা হবে এখন তোমরা চিরদিন এখানে থাকবে।’’ (সূরা যুখরুফ: ৭০)
এখানেও দেখা যাচ্ছে কোথাও স্বর্ণের এবং কোথাও রৌপ্যের পাত্রের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। অর্থাৎ সেখানে স্বর্ণের অথবা রৌপের পান পাত্র একত্রে অথবা পৃথক পৃথক ব্যবহার করা হবে। তবে রৌপ্য পাত্রের আরেকটি বৈশিষ্ট্যের কথা বলা হয়েছে যে, সে পাত্রগুলো যদিও রৌপ্যের তৈরী হয় কিন্তু কাঁচের মতো স্বচ্ছ দেখা যাবে। যা দেখলে কাঁচের মতোই মনে হবে কিন্তু কাঁচের মতো ভঙ্গুর হবে না। ঠিক তদ্রুপ স্বচ্ছ বালাখানার কথাও হাদীসে উল্লেখ আছে। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«إن في الجنة غر فا يرى ظاهرها من باطنها وباطنها من ظاهرها»
‘‘জান্নাতের মধ্যে এমন বালাখানা আছে (স্বচ্ছতার কারণে) যার ভেতরের অংশ বাইরে থেকে এবং বাইরের অংশ ভেতর থেকে দেখা যায়।’’ (মুসনাদে আহমাদ ২/১৭৩)
«أمشاطهم الذهب —— ومجامرهم الألوة»
‘‘তাদের চিরুনী হবে স্বর্ণের তৈরি — তাদের ধুপদানী সুগন্ধী কাঠ দিয়ে জ্বালানো হবে।’’ (বুখারী, ৩২৪৫; মুসলিম, ২৮৩৪)
সোনা-রূপার জান্নাত
আবু মূসা আশ‘আরী থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: “দুটো জান্নাত রূপার এবং পানপাত্র ও আসবাপত্রও রূপার। আর দুটো জান্নাত সোনার এবং পানপাত্র ও আসবাবপত্র সোনার। জান্নাতে আদনে তাদের ও আল্লাহর মধ্যে দৃষ্টির আড়াল হলো আল্লাহর অহংকারের চাদর।” (বুখারী, ৪৮৭৮; মুসলিম, ১৮০)।
জান্নাতের ইটগুলো সোনা ও রূপার, সিমেন্ট হচ্ছে মেশক, কংকর হচ্ছে মণি-মুক্তা ও ইয়াকুত পাথর এবং মাটি হচ্ছে যাফরান।
জান্নাতের বাজারের বর্ণনা
আনাস ইবন মালেক রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: “জান্নাতে একজন আওয়াজ দানকারী আওয়াজ দিয়ে বলবে: তোমরা এখন থেকে চিরসু্স্থ, কখনও অসুস্থ হবে না; তোমরা এখন থেকে চিরদিন জীবিত, আর মৃত্যু বরণ করবে না, তোমরা এখন থেকে চিরযুবক, আর কোনদিন বৃদ্ধ হবে না, তোমরা এখন থেকে চিরস্থায়ী নিয়ামত ও সুখ-শান্তিতে থাকবে, কখনও দুঃখ-বেদনার সম্মুখীন হবে না।” একথাই আল্লাহ নিম্নোক্ত আয়াতে বলেন: তাদেরকে ডেকে বলা হবে, তোমাদের আমলের বিনিময়ে তোমরা এ জান্নাত লাভ করেছো।’ (মুসলিম, ২৮৩৭)
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন:
‘‘জান্নাতে একটি বাজার আছে। সেখানে জান্নাতীগণ প্রতি শুক্রবার যাবে। সেখানে উত্তর দিকে হতে মৃদুমন্দ বাতাস প্রবাহিত হয়ে জান্নাতীদের মুখমন্ডল ও পরিধের বস্ত্রাদি সুগন্ধিতে ভরিয়ে দেবে। আর তাদের সৌন্দর্য ও রূপ লাবণ্য পর্যায়ক্রমে বাড়তে থাকবে। সুতরাং তারা অত্যন্ত সুন্দর ও লাবণ্যময় হয়ে নিজেদের স্ত্রী নিকট ফিরে আসবে। স্ত্রীগণ তাদেরকে দেখে বলবে, আল্লাহর শপথ‘‘ তোমার যে সৌন্দর্য্য ও লাবণ্যের অধিকারী হয়েছো। আবার পুরুষগণও বলবে, আল্লাহর কসম! আমরা তোমাদের কাছ হতে যাবার পর তোমাদের রূপলাবণ্য ও সৌন্দর্যও অনেক গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। (মুসলিম, ২৮৩৩)
জান্নাতবাসীদের খাদ্য ও পানীয়
আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿ وَفَٰكِهَةٖ مِّمَّا يَتَخَيَّرُونَ ٢٠ وَلَحۡمِ طَيۡرٖ مِّمَّا يَشۡتَهُونَ ٢١ ﴾ [الواقعة: ٢٠، ٢١]
“আর (ঘোরাফেরা করবে) তাদের পছন্দমত ফলমূল নিয়ে, আর তাদের ঈপ্সিত পাখীর গোশ্ত নিয়ে। [সূরা আল-ওয়াকি‘আহ: ২০-২১]
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা আরও বলেন:
﴿ هَٰذَا ذِكۡرٞۚ وَإِنَّ لِلۡمُتَّقِينَ لَحُسۡنَ مََٔابٖ ٤٩ جَنَّٰتِ عَدۡنٖ مُّفَتَّحَةٗ لَّهُمُ ٱلۡأَبۡوَٰبُ ٥٠ مُتَّكِِٔينَ فِيهَا يَدۡعُونَ فِيهَا بِفَٰكِهَةٖ كَثِيرَةٖ وَشَرَابٖ ٥١ ﴾ [ص: ٤٩، ٥١]
“এ এক স্মরণ, আর মুত্তাকীদের জন্য রয়েছে উত্তম আবাস, জান্নাত, যার দরজাসমূহ তাদের জন্য উন্মুক্ত। সেখানে তারা আসীন হবে হেলান দিয়ে, সেখানে তারা বহুবিধ ফলমূল ও পানীয় চাইবে।” [সূরা সদ, ৪৯-৫১]
আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন:
﴿ إِنَّ ٱلۡأَبۡرَارَ يَشۡرَبُونَ مِن كَأۡسٖ كَانَ مِزَاجُهَا كَافُورًا ٥ عَيۡنٗا يَشۡرَبُ بِهَا عِبَادُ ٱللَّهِ يُفَجِّرُونَهَا تَفۡجِيرٗا ٦ ﴾ [الانسان: ٥، ٦]
“নিশ্চয় সৎকর্মশীলেরা পান করবে এমন পূর্ণপাত্র-পানীয় থেকে যার মিশ্রণ হবে কাফূর — এমন একটি প্রস্রবণ যা থেকে আল্লাহ্র বান্দাগণ পান করবে, তারা এ প্রস্রবণকে যথেচ্ছা প্রবাহিত করবে।” [সূরা আল-ইনসান, ৫-৬]
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা আরও বলেন:
﴿مَنۡ عَمِلَ سَيِّئَةٗ فَلَا يُجۡزَىٰٓ إِلَّا مِثۡلَهَاۖ وَمَنۡ عَمِلَ صَٰلِحٗا مِّن ذَكَرٍ أَوۡ أُنثَىٰ وَهُوَ مُؤۡمِنٞ فَأُوْلَٰٓئِكَ يَدۡخُلُونَ ٱلۡجَنَّةَ يُرۡزَقُونَ فِيهَا بِغَيۡرِ حِسَابٖ ٤٠﴾ [غافر: ٤٠]
“কেউ মন্দ কাজ করলে সে শুধু তার কাজের অনুরূপ শাস্তিই প্রাপ্ত হবে। আর যে পুরুষ কিংবা নারী মুমিন হয়ে সৎকাজ করবে তবে তারা প্রবেশ করবে জান্নাতে, সেখানে তাদেরকে দেয়া হবে অগণিত রিযিক।”(সূরা গাফের: ৪০)
আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন:
﴿ يُطَافُ عَلَيۡهِم بِصِحَافٖ مِّن ذَهَبٖ وَأَكۡوَابٖۖ وَفِيهَا مَا تَشۡتَهِيهِ ٱلۡأَنفُسُ وَتَلَذُّ ٱلۡأَعۡيُنُۖ وَأَنتُمۡ فِيهَا خَٰلِدُونَ ٧١ ﴾ [الزخرف: ٧١]
“স্বর্ণের থালা ও পানপাত্র নিয়ে তাদেরকে প্রদক্ষিণ করা হবে; সেখানে মন যা চায় এবং যাতে নয়ন তৃপ্ত হয় তাই থাকবে। আর সেখানে তোমরা স্থায়ী হবে।” (সূরা যুখরুফ: ৭১)
আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন:
﴿إِنَّ ٱلۡمُتَّقِينَ فِي جَنَّٰتٖ وَنَعِيمٖ ١٧ فَٰكِهِينَ بِمَآ ءَاتَىٰهُمۡ رَبُّهُمۡ وَوَقَىٰهُمۡ رَبُّهُمۡ عَذَابَ ٱلۡجَحِيمِ ١٨ كُلُواْ وَٱشۡرَبُواْ هَنِيَٓٔۢا بِمَا كُنتُمۡ تَعۡمَلُونَ ١٩﴾ [الطور: ١٧، ١٩]
‘‘মুত্তাকী লোকেরা সেখানে বাগানসমূহে ও নিয়ামত সম্ভারের মধ্যে অবস্থান করবে। মজা ও স্বাদ আস্বাদন করতে থাকবে সে সব জিনিসের যা তাদের রব তাদেরকে দেবেন। আর তাদের রব তাদেরকে জাহান্নামের আজাব হতে রক্ষা করবেন। (তাদেরকে বলা হবে) খাও এবং পান কর মজা ও তৃপ্তির সাথে। এটা তো তোমাদের সে সব কাজের প্রতিফলন যা তোমরা (পৃথিবীতে) করছিলে।’’ (সূরা তুর: ১৭-১৯)
অন্যত্র বলা হয়েছে:
﴿ فَهُوَ فِي عِيشَةٖ رَّاضِيَةٖ ٢١ فِي جَنَّةٍ عَالِيَةٖ ٢٢ قُطُوفُهَا دَانِيَةٞ ٢٣ كُلُواْ وَٱشۡرَبُواْ هَنِيَٓٔۢا بِمَآ أَسۡلَفۡتُمۡ فِي ٱلۡأَيَّامِ ٱلۡخَالِيَةِ ٢٤ ﴾ [الحاقة: ٢١، ٢٤]
‘‘সেখানে তারা বাঞ্ছিত সুখভোগ লিপ্ত থাকবে। (তাদের অবস্থান হবে) জান্নাতের উচ্চতম স্থানে। যা ফলসমূহের গুচ্ছ ঝুলতে থাকবে। (বলা হবে) খাও এবং পান করো, তৃপ্তি সহকারে। সে সব আমলের বিনিময়ে যা তোমরা অতীত দিনে করেছো। ’’ (সূরা আল হাক্কাহ: ২১-২৪)
আরো বলা হয়েছে:
﴿ ۖ كُلَّمَا رُزِقُواْ مِنۡهَا مِن ثَمَرَةٖ رِّزۡقٗا قَالُواْ هَٰذَا ٱلَّذِي رُزِقۡنَا مِن قَبۡلُۖ وَأُتُواْ بِهِۦ مُتَشَٰبِهٗاۖ ﴾ [البقرة: ٢٥]
‘‘জান্নাতের ফল দেখতে পৃথিবীর ফলের মতোই হবে। যখন কোন ফল তাদের দেয়া হবে খাবার জন্য, তারা বলবে: এ ধরনের ফল তো আমরা পৃথিবীতেই খেয়েছি।’’ (সূরা বাকারা: ২৫)
ফলগুলো যদিও পৃথিবীর মতো মনে হবে কিন্তু স্বাদ ও গন্ধে সম্পূর্ণ উন্নত ও ভিন্ন ধরনের হবে। প্রতিবার খাওয়ার সময়ই তার স্বাদ গন্ধ শেনৈ: শেনৈ: বৃদ্ধি পাবে।
এখানে প্রশ্ন হতে পারে যে, পৃথিবীতে দুঃখ আছে বলেই সুখকে আমরা উপভোগ করতে পারি। কিন্তু জান্নাতে যদি দুঃখ না থাকে তবে শুধু সুখ উপভোগ করা যাবে কি? বা সুখ ভোগ করতে করতে একঘেয়েমী লাগবে না?
এ দুটি উত্তর হতে পারে
প্রথমত: জান্নাতীগণ জাহান্নামীদের অবস্থা অবলোকন করতে পারবে এবং কথপোকথনও হবে। তাই তাদের সুখকে জাহান্নামীদের সাথে তুলনা করতে কষ্ট হবে না এবং সে সুখে এক ঘেয়েমিও আসবে না।
দ্বিতীয়ত: দুঃখ না থাকলেও সুখের মাত্রা স্থিতিশীল হবে না, পর্যায়ক্রমে বৃদ্ধি পেতে থাকবে। কাজেই সে সুখভোগ কখনো ক্লান্তি আনে না বরং সুখভোগের অনুভুতি তীব্র হতে তীব্রতর হবে।
জান্নাতীদের প্রস্রাব পায়খানার প্রয়োজন হবে না
জাবির রাদিয়াল্লাহু আনহু নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে বর্ণনা করেছেন যে, তিনি বলেছেন:
«يأكل أهل الجنة فيها ويشربون لا يتغوطون ولا يمتخطون ولا يبو لون ولكن طعامهم ذلك جشاء كرشح المسك يلهمون التسبيح والتكبير كما يلهمون النفس»
‘‘জান্নাতীগণ জান্নাতের খাবার খাবে এবং পানীয় বস্তু পান করবে কিন্তু সেখানে তাদের পায়খানা প্রস্রাবের প্রয়োজন হবে না, এমনকি তাদের নাকে ময়লাও জমবে না। ঢেকুরের মাধ্যমে তাদের পেটের খাদ্র্যদ্রব্য হজম হয়ে মিশকের সুগন্ধির মতো বেরিয়ে যাবে। স্বাস-প্রশ্বাস গ্রহণের মতোই তারা তাসবীহ তাকবীরে অভ্যস্ত হয়ে যাবে।’’ (মুসলিম, ২৮৩৫)
অন্যত্র বলা হয়েছে:
«لايبولون ولا يتغطون ولا يتفلون ولا يمتخطون»
‘‘তাদেরকে পেশাব পায়খানা করতে হবে না, মুখে থুথু আসবে না, আর নাকে কোনরূপ ময়লা জমবে না।’’ (বুখারী, ৩৩২৭; মুসলিম, ২৮৩৪)
জান্নাতবাসীদের পোষাক-পরিচ্ছদ
আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿يُحَلَّوۡنَ فِيهَا مِنۡ أَسَاوِرَ مِن ذَهَبٖ وَلُؤۡلُؤٗاۖ وَلِبَاسُهُمۡ فِيهَا حَرِيرٞ ٢٣ ﴾ [الحج: ٢٣]
“সেখানে তাদেরকে অলংকৃত করা হবে সোনার কাঁকন ও মুক্তা দ্বারা এবং সেখানে তাদের পোষাক-পরিচ্ছদ হবে রেশমের।”(সূরা আল-হাজ্জ: ২৩)
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা আরও বলেন:
﴿ يُحَلَّوۡنَ فِيهَا مِنۡ أَسَاوِرَ مِن ذَهَبٖ وَيَلۡبَسُونَ ثِيَابًا خُضۡرٗا مِّن سُندُسٖ وَإِسۡتَبۡرَقٖ مُّتَّكِِٔينَ فِيهَا عَلَى ٱلۡأَرَآئِكِۚ نِعۡمَ ٱلثَّوَابُ وحَسُنَتۡ مُرۡتَفَقٗا ٣١ ﴾ [الكهف: ٣١]
“সেখানে তাদেরকে স্বর্ণ কংকনে অলংকৃত করা হবে, তারা পরবে সূক্ষ্ম ও পুরু রেশমের সবুজ বস্ত্র, আর তারা সেখানে থাকবে হেলান দিয়ে সুসজ্জিত আসনে; কত সুন্দর পুরস্কার ও উত্তম বিশ্রামস্থল!” (সূরা আল-কাহাফ: ৩১)
আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন:
عَٰلِيَهُمۡ ثِيَابُ سُندُسٍ خُضۡرٞ وَإِسۡتَبۡرَقٞۖ وَحُلُّوٓاْ أَسَاوِرَ مِن فِضَّةٖ وَسَقَىٰهُمۡ رَبُّهُمۡ شَرَابٗا طَهُورًا ٢١ ﴾ [الانسان: ٢١]
“তাদের আবরণ হবে সূক্ষ্ম সবুজ রেশম ও স্থূল রেশম, আর তারা অলংকৃত হবে রৌপ্য নির্মিত কংকনে, আর তাদের রব তাদেরকে পান করাবেন পবিত্র পানীয়।” (সূরা আল-ইনসান: ২১)
সূরা আর রাহমানে বলা হয়েছে:
﴿ مُتَّكِِٔينَ عَلَىٰ رَفۡرَفٍ خُضۡرٖ وَعَبۡقَرِيٍّ حِسَانٖ ٧٦ ﴾ [الرحمن: ٧٦]
‘‘তারা সবুজ গালিচা ও সুন্দর সুরঞ্জিত শয্যায় এলায়িতভাবে অবস্থান করবে।’’ (সূরা আর রহমান: ৭৬)
উপরোক্ত আয়াতসমূহের আলোকে বুঝা যায় যে, উক্ত পোশাক এবং অলংকার পুরুষ ও মহিলা উভয়কেই পরানো হবে অলংকার সাধারণত: মহিলাগণই পরে থাকে। কিন্তু পুরুষদেরকে পরানো হবে, কথাটি আমাদের নিকট একটু খটকা লাগে। তবে গভীরভাবে চিন্তা করলেই বুঝা যায় যে, প্রাচীনকালে এমন কি কুরআন যখন অবতীর্ণ হয়েছে তখনো রাজা-বাদশাগণ, সমাজপতি ও সম্ভ্রান্ত ব্যক্তিবর্গ হাতে, কানে, গলায় পোষাক পরিচ্ছদের অলংকার ও মুকুট ব্যবহার করতেন। এককালে আমাদের দেশের রাজা বাদশা ও জমিদারগণ বিভিন্ন প্রকার অলংকার পরতেন সত্যি করা বলতে কি, তখন পুরুষদের অলংকারদি ছিলো কৌলিন্যের প্রতীক। এ কথাটি সূরা যুখরুফের একটি আয়াতেও প্রমাণিত হয়। যখন মূসা (আলাইহিস সালাম) জাকজমকহীন পোষাকে শুধুমাত্র একটি লাঠি হাতে ফিরআউনের দরবারে গেলেন, ফিরআউনকে দাওয়াত দেয়ার জন্য, তখন সে সভাসদকে লক্ষ্য করে বলে উঠলো:
‘‘এ যদি আসমান জমিনের বাদশাহর নিকট হতে প্রেরিতই হতো তবে তাকে স্বর্ণের কংকন পরিয়ে দেয়া হলো না কেনো? কিংবা ফেরেশতাদের একটা বাহিনীই না হয় তার আর্দালী হয়ে আসতো।’’ (সূরা যখরুফ: ৫৩)
কোথাও স্বর্ণের কংকন আবার কোথাও রৌপের কংকন পরানোর কথা বলা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে কোনো কোনো আলেম বলেন:
‘‘এ সব কটি আয়াত একত্র করে পাঠ করলে তিনটি অবস্থা সম্ভব বলে মনে হয়।
প্রথমত: তারা কখনো স্বর্ণের এবং কখনো রৌপের কংকন পরতে চাবে, আর উভয় জিনিসই তাদের ইচ্ছানুযায়ী থাকবে।
দ্বিতীয়ত: স্বর্ণ ও রৌপ্যের কংকন তারা একসঙ্গে পরবে। কেননা, তাতে সৌন্দর্য্যের মাত্রা অনেকগুণ বৃদ্ধি পেয়ে যাবে।
তৃতীয়ত: যার ইচ্ছা হবে স্বর্ণের কংকন পরবে এবং যার ইচ্ছা হবে রৌপ্যের কংকন পরবে।”
জান্নাতের বিছানা
আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿ فِيهَا سُرُرٞ مَّرۡفُوعَةٞ ١٣ وَأَكۡوَابٞ مَّوۡضُوعَةٞ ١٤ وَنَمَارِقُ مَصۡفُوفَةٞ ١٥ وَزَرَابِيُّ مَبۡثُوثَةٌ ١٦ ﴾ [الغاشية: ١٣، ١٦]
“সেখানে থাকবে উন্নত শয্যাসমূহ, আর প্রস্তুত থাকবে পানপাত্র, সারি সারি উপাধান এবং বিছানা গালিচা।” (সূরা আল-গাশিয়া: ১৩ – ১৬)
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা আরও বলেন:
﴿ مُتَّكِِٔينَ عَلَىٰ فُرُشِۢ بَطَآئِنُهَا مِنۡ إِسۡتَبۡرَقٖۚ وَجَنَى ٱلۡجَنَّتَيۡنِ دَانٖ ٥٤ ﴾ [الرحمن: ٥٤]
“সেখানে তারা হেলান দিয়ে বসবে এমন ফরাশে যার অভ্যন্তরভাগ হবে পুরু রেশমের। আর দুই উদ্যানের ফল হবে কাছাকাছি।” (সূরা আর-রাহমান: ৫৪)
আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন:
﴿ مُتَّكِِٔينَ عَلَىٰ رَفۡرَفٍ خُضۡرٖ وَعَبۡقَرِيٍّ حِسَانٖ ٧٦ ﴾ [الرحمن: ٧٦]
“তারা হেলান দিয়ে বসবে সবুজ তাকিয়ায় ও সুন্দর গালিচার উপরে।” (সূরা আর-রাহমান: ৭৬)
জান্নাতবাসীদের অলঙ্কার
আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿ يُحَلَّوۡنَ فِيهَا مِنۡ أَسَاوِرَ مِن ذَهَبٖ وَلُؤۡلُؤٗاۖ وَلِبَاسُهُمۡ فِيهَا حَرِيرٞ ٢٣ ﴾ [الحج: ٢٣]
“সেখানে তাদেরকে অলংকৃত করা হবে সোনার কাঁকন ও মুক্তা দ্বারা এবং সেখানে তাদের পোষাক-পরিচ্ছদ হবে রেশমের।”(সূরা আল-হাজ্জ: ২৩)
আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿ عَٰلِيَهُمۡ ثِيَابُ سُندُسٍ خُضۡرٞ وَإِسۡتَبۡرَقٞۖ وَحُلُّوٓاْ أَسَاوِرَ مِن فِضَّةٖ وَسَقَىٰهُمۡ رَبُّهُمۡ شَرَابٗا طَهُورًا ٢١ ﴾ [الانسان: ٢١]
“তাদের আবরণ হবে সূক্ষ্ম সবুজ রেশম ও স্থূল রেশম, আর তারা অলংকৃত হবে রৌপ্য নির্মিত কংকনে, আর তাদের রব তাদেরকে পান করাবেন পবিত্র পানীয়।”(সূরা আল-ইনসান: ২১)
জান্নাতীদের সৌন্দর্য ও সম্প্রীতি
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন:
«ان اول زمرة يدخلون الجنة على صورة القمر ليلة البدر ثم الذين يلو نهم كا شد كوكب درى فى السماء اضاءة قلو بهم على قلب رجل واحد لا اختلاف بينهم ولاتباغض»
‘‘যে দলটি সর্বপ্রথম জান্নাতে প্রবেশ করবে তাদের চেহারা পূর্ণিমার চাঁদের মতো সুন্দর ও উজ্জল হবে। তাদের পর যারা প্রবেশ করবে তাদের চেহারা হবে আকাশের সর্বাধিক আলোকউজ্জল তারকার মতো জ্যোর্তিময়। আর সকলের অন্তকরণ একটি অন্তকরণ সাদৃশ হবে। তাদের মধ্যে পারস্পারিক মতভেদ বা বৈপরিত্য থাকবে না। (বুখারী, ৩২৪৬; মুসলিম, ২৮৩৪)
আল্লাহ রাববুল আলামীন ইরশাদ করেছেন:
﴿ وَنَزَعۡنَا مَا فِي صُدُورِهِم مِّنۡ غِلٍّ إِخۡوَٰنًا عَلَىٰ سُرُرٖ مُّتَقَٰبِلِينَ ٤٧ ﴾ [الحجر: ٤٧]
‘‘আমি তাদের অন্তর থেকে ঈর্ষা ও বৈরিতা দূর করে দেবো। তারা ভাইয়ের মতো পরস্পর মুখোমুখি হয়ে আসন সমূহে সমাসীন থাকবে।’’ [সূরা আল-হিজর: ৪৭]
জান্নাতীগণ জান্নাতী বাপদাদা, স্ত্রী ও সন্তানসহ একান্নবর্তী পরিবারের ন্যায় বসবাস করবে
মহান আল্লাহ বলেন:
﴿ وَٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ وَٱتَّبَعَتۡهُمۡ ذُرِّيَّتُهُم بِإِيمَٰنٍ أَلۡحَقۡنَا بِهِمۡ ذُرِّيَّتَهُمۡ وَمَآ أَلَتۡنَٰهُم مِّنۡ عَمَلِهِم مِّن شَيۡءٖۚ كُلُّ ٱمۡرِيِٕۢ بِمَا كَسَبَ رَهِينٞ ٢١ ﴾ [الطور: ٢١]
‘‘যারা ঈমান এনেছে এবং তাদের সন্তানও ঈমানের কোন মাত্রায় তাদের পদাংক অনুসরণ করেছে, তাদের সে সন্তানদেরকে আমরা (জান্নাতে) তাদের সাথে একত্রিত করবো, আর তাদের আমলে কোন কম করা হবে না।’’ (সূরা তুর: ২১)
সূরা রাদে বলা হয়েছে:
﴿جَنَّٰتُ عَدۡنٖ يَدۡخُلُونَهَا وَمَن صَلَحَ مِنۡ ءَابَآئِهِمۡ وَأَزۡوَٰجِهِمۡ وَذُرِّيَّٰتِهِمۡۖ وَٱلۡمَلَٰٓئِكَةُ يَدۡخُلُونَ عَلَيۡهِم مِّن كُلِّ بَابٖ ٢٣ ﴾ [الرعد: ٢٣]
‘‘তারাতো চিরন্তন জান্নাতে প্রবেশ করবেই, তাদের সাথে তাঁদের বাপ-দাদা, তাদের স্ত্রী এবং তাদের সন্তানদের মধ্যে যারা সৎ ও নেককার তারাও তাদের সাথে সেখানে (জান্নাতে) যাবে। ফেরেশতাগণ চারদিক হতে তাদেরকে সম্বর্ধনা দিতে আসবে এবং বলবে তোমাদের প্রতি শান্তি।’’(সূরা রা‘দ: ২৩)
এখানে উল্লেখ্য যে, যে সন্তান অপ্রাপ্ত বয়সে মৃত্যুবরণ করে তাদের কথা বলা হয় নি, কেননা তাদের ব্যাপারে তো কুফুর, ঈমান, আল্লাহর আনুগত্য ও নাফরমানীর প্রশ্নই উঠে না। সহীহ হাদীসে বর্ণিত আছে যে, ঈমানদের সন্তান-সন্তুতি এমনিই জান্নাতে যাবে এবং মা বাপের সন্তুষ্টির জন্য তাদের সাথে একত্রিত করে দেয়া হবে।
জান্নাতে চিরস্থায়ীভাবে অবস্থান
আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿ إِنَّ ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ وَعَمِلُواْ ٱلصَّٰلِحَٰتِ كَانَتۡ لَهُمۡ جَنَّٰتُ ٱلۡفِرۡدَوۡسِ نُزُلًا ١٠٧ خَٰلِدِينَ فِيهَا لَا يَبۡغُونَ عَنۡهَا حِوَلٗا ١٠٨ ﴾ [الكهف: ١٠٧، ١٠٨]
“নিশ্চয় যারা ঈমান এনেছে এবং সৎকাজ করেছে তাদের আতিথেয়তার জন্য রয়েছে জান্নাতুল ফিরদাউস। সেখানে তারা চিরকাল থাকবে, সেখান থেকে তারা স্থানান্তরিত হতে চাইবে না।”( সূরা আল-কাহাফ: ১০৭ – ১০৮)
রবের সামনে দণ্ডায়মানে ভীত ব্যক্তির জন্য দু’টি জান্নাত
আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿ وَلِمَنۡ خَافَ مَقَامَ رَبِّهِۦ جَنَّتَانِ ٤٦ فَبِأَيِّ ءَالَآءِ رَبِّكُمَا تُكَذِّبَانِ ٤٧ ذَوَاتَآ أَفۡنَانٖ ٤٨ فَبِأَيِّ ءَالَآءِ رَبِّكُمَا تُكَذِّبَانِ ٤٩ فِيهِمَا عَيۡنَانِ تَجۡرِيَانِ ٥٠ فَبِأَيِّ ءَالَآءِ رَبِّكُمَا تُكَذِّبَانِ ٥١ فِيهِمَا مِن كُلِّ فَٰكِهَةٖ زَوۡجَانِ ٥٢ فَبِأَيِّ ءَالَآءِ رَبِّكُمَا تُكَذِّبَانِ ٥٣ ﴾ [الرحمن: ٤٦، ٥٣]
“আর যে তার রবের সম্মুখে উপস্থিত হওয়ার ভয় রাখে, তার জন্য রয়েছে দুটি উদ্যান। কাজেই তোমরা উভয়ে তোমাদের রবের কোন্ অনুগ্রহে মিথ্যারোপ করবে? উভয়ই বহু শাখা-পল্লববিশিষ্ট। কাজেই তোমরা উভয়ে তোমাদের রবের কোন অনুগ্রহে মিথ্যারোপ করবে? উভয় উদ্যানে রয়েছে প্রবাহমান দুই প্রস্রবণ। কাজেই তোমরা উভয়ে তোমাদের রবের কোন অনুগ্রহে মিথ্যারোপ করবে? উভয় উদ্যানে রয়েছে প্রত্যেক ফল দুই দুই প্রকার। কাজেই তোমরা উভয়ে তোমাদের রবের কোন অনুগ্রহে মিথ্যারোপ করবে?”(সূরা আর-রাহমান: ৪৬ – ৫৩)
জান্নাতীগণ সর্বাধিক বড় নিয়ামত আল্লাহর দর্শন লাভ করবে
আল্লাহর দর্শনের ব্যাপারে আল-কুরআনের মাত্র দু’জায়গায় আলোচনা করা হয়েছে। সূরা আল কিয়ামাহ এবং সূরা আল-মুতাফফিফীনে।
আল্লাহ বলেন:
﴿ وُجُوهٞ يَوۡمَئِذٖ نَّاضِرَةٌ ٢٢ إِلَىٰ رَبِّهَا نَاظِرَةٞ ٢٣ ﴾ [القيامة: ٢٢، ٢٣]
“সেদিন অনেক মুখমন্ডল উজ্জ্বল হবে। তারা তাদের রবের প্রতি তাকিয়ে থাকবে।” (সূরা কিয়ামাহ: ২২-২৩)
অন্যত্র বলা হয়েছে:
﴿ كَلَّآ إِنَّهُمۡ عَن رَّبِّهِمۡ يَوۡمَئِذٖ لَّمَحۡجُوبُونَ ١٥ ﴾ [المطففين: ١٥]
‘‘কখনই নয়। নিঃসন্দেহে সেদিন এ লোকদেরকে তাদের রব এর দর্শন হতে বঞ্চিত রাখা হবে।’’ (সূরা মুতাফফিফীন: ১৫)
নবী করীম রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন যে, “আল্লাহর কসম, জান্নাতীদের জন্য আল্লাহর দর্শন ব্যতিরেকে অধিক প্রিয় ও পছন্দনীয় আর কিছু হবে না।” (মুসলিম, ১৮১; তিরমিযী, ২৫৫২)
অন্যত্র বলা হয়েছে:
«إِنَّ اللَّهَ تَبَارَكَ وَتَعَالَى يَقُولُ لِأَهْلِ الجَنَّةِ: يَا أَهْلَ الجَنَّةِ؟ فَيَقُولُونَ: لَبَّيْكَ رَبَّنَا وَسَعْدَيْكَ، فَيَقُولُ: هَلْ رَضِيتُمْ؟ فَيَقُولُونَ: وَمَا لَنَا لاَ نَرْضَى وَقَدْ أَعْطَيْتَنَا مَا لَمْ تُعْطِ أَحَدًا مِنْ خَلْقِكَ، فَيَقُولُ: أَنَا أُعْطِيكُمْ أَفْضَلَ مِنْ ذَلِكَ، قَالُوا: يَا رَبِّ، وَأَيُّ شَيْءٍ أَفْضَلُ مِنْ ذَلِكَ؟ فَيَقُولُ: أُحِلُّ عَلَيْكُمْ رِضْوَانِي، فَلاَ أَسْخَطُ عَلَيْكُمْ بَعْدَهُ أَبَدًا»
“মহান ও পরাক্রমশালী আল্লাহ জান্নাতবাসীদের বলবেন, হে জান্নাত বাসীগণ! তারা বলবে হে আমাদের প্রভূ, আমরা উপস্থিত। সমস্ত মঙ্গল ও কল্যাণ আপনার হাতে। (কি আদেশ বলুন!) আল্লাহ তা’আলা তাদেরকে জিজ্ঞাসা করবেন, তোমরা কি তোমাদের আমলের প্রতিদান পেয়ে সন্তুষ্ট হয়েছ? তারা (জান্নাতীগণ) জবাব দিবে-হে আমাদের রব, আপনি আমাদেরকে এমন সব নেয়ামত দিয়েছেন যা অন্য কাউকে দেননি। তখন আমরা সন্তুষ্ট হবো না কেনো? তখন আল্লাহ বলবেন আমি কি তোমাদেরকে এর চেয়েও অধিক উত্তম ও উন্নত জিনিস দান করবো না? তারা বলবে এর চেয়ে অধিক ও উত্তম বস্তু আর কি হতে পারে? তখন আল্লাহ বলবেন আমি চিরকাল তোমাদের উপর সন্তুষ্ট থাকবো। কোনদিন আর অসন্তুষ্ট হবো না। (বুখারী, ৬৫৪৯; মুসলিম, ২৮২৯)
অন্য হাদীসে আছে এ কথা শুনে জান্নাতীগণ তাদের সমস্ত নেয়ামতের কথা ভুলে যাবে। কেননা এ সুসংবাদ-ই হচ্ছে তাদের কাছে সবচেয়ে বড়ো নেয়ামত।
সোহাইব ইবন সেনান আর-রূমী থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
«إِذَا دَخَلَ أَهْلُ الْجَنَّةِ الْجَنَّةَ، قَالَ: يَقُولُ اللهُ تَبَارَكَ وَتَعَالَى: تُرِيدُونَ شَيْئًا أَزِيدُكُمْ؟ فَيَقُولُونَ: أَلَمْ تُبَيِّضْ وُجُوهَنَا؟ أَلَمْ تُدْخِلْنَا الْجَنَّةَ، وَتُنَجِّنَا مِنَ النَّارِ؟ قَالَ: فَيَكْشِفُ الْحِجَابَ، فَمَا أُعْطُوا شَيْئًا أَحَبَّ إِلَيْهِمْ مِنَ النَّظَرِ إِلَى رَبِّهِمْ عَزَّ وَجَلَّ»
জান্নাতীরা জান্নাতে প্রবেশের পর আল্লাহ তাদেরকে জিজ্ঞেস করবেন, তোমরা কি আরো কিছু চাও, তাহলে আমি তা বাড়িয়ে দেবো? তারা উত্তরে বলবে, আপনি কি আমাদের চেহারা উজ্জ্বল করেন নি, আমাদেরকে কি জাহান্নাম থেকে মুক্তি দিয়ে জান্নাতে প্রবেশ করাননি? এরপর আল্লাহ নিজের নূরের পর্দা খুলে ফেলবেন। আল্লাহর অতিশয় সুন্দর সত্তার প্রতি দৃষ্টি দান অপেক্ষা তাদেরকে জান্নাতের আর কোন উত্তম নিয়ামত দেয়া হয় নি। (মুসলিম, ১৮১)
জান্নাত চাইতে হবে আল্লাহর কাছে
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমরা যখন আল্লাহর কাছে জান্নাত চাইবে তখন জান্নাতুল ফেরদৌস চাইবে। সেটাই মধ্যম ও সর্বোচ্চ জান্নাত।
জান্নাতীদেরকে অসংখ্য ও অগণিত নিয়ামত দেয়া হবে। আল্লাহ এক সাথে অনেক নিয়ামতের উল্লেখ করেছেন নিম্নোক্ত আয়াতে:
﴿وَجَزَىٰهُم بِمَا صَبَرُواْ جَنَّةٗ وَحَرِيرٗا ١٢ مُّتَّكِِٔينَ فِيهَا عَلَى ٱلۡأَرَآئِكِۖ لَا يَرَوۡنَ فِيهَا شَمۡسٗا وَلَا زَمۡهَرِيرٗا ١٣ وَدَانِيَةً عَلَيۡهِمۡ ظِلَٰلُهَا وَذُلِّلَتۡ قُطُوفُهَا تَذۡلِيلٗا ١٤ وَيُطَافُ عَلَيۡهِم بَِٔانِيَةٖ مِّن فِضَّةٖ وَأَكۡوَابٖ كَانَتۡ قَوَارِيرَا۠ ١٥ قَوَارِيرَاْ مِن فِضَّةٖ قَدَّرُوهَا تَقۡدِيرٗا ١٦ وَيُسۡقَوۡنَ فِيهَا كَأۡسٗا كَانَ مِزَاجُهَا زَنجَبِيلًا ١٧ عَيۡنٗا فِيهَا تُسَمَّىٰ سَلۡسَبِيلٗا ١٨ ۞وَيَطُوفُ عَلَيۡهِمۡ وِلۡدَٰنٞ مُّخَلَّدُونَ إِذَا رَأَيۡتَهُمۡ حَسِبۡتَهُمۡ لُؤۡلُؤٗا مَّنثُورٗا ١٩ وَإِذَا رَأَيۡتَ ثَمَّ رَأَيۡتَ نَعِيمٗا وَمُلۡكٗا كَبِيرًا ٢٠ عَٰلِيَهُمۡ ثِيَابُ سُندُسٍ خُضۡرٞ وَإِسۡتَبۡرَقٞۖ وَحُلُّوٓاْ أَسَاوِرَ مِن فِضَّةٖ وَسَقَىٰهُمۡ رَبُّهُمۡ شَرَابٗا طَهُورًا ٢١ إِنَّ هَٰذَا كَانَ لَكُمۡ جَزَآءٗ وَكَانَ سَعۡيُكُم مَّشۡكُورًا ٢٢ ﴾ [الانسان: ١٢، ٢٢]
“এবং তাদের সবর ও ধৈর্যের বিনিময়ে তাদেরকে দেবেন জান্নাত ও রেশমী পোশাক-আশাক। তারা সেখানে সিংহাসনে হেলান দিয়ে বসবে। সেখানে রোদের তাপ ও শীতের ঠান্ডা অনুভব করবে না। আর গাছের ছায়া তাদের উপর ঝুঁকে থাকবে এবং ফলসমূহ তাদের আয়ত্বে রাখা হবে। তাদেরকে খাদ্য ও পানীয় পরিবেশন করা হবে রূপার পাত্রে এবং স্ফুটিকের মতো পানপাত্রে। পরিবেশনকারীরা তা পরিমাণ করে পূর্ণ করবে। তাদেরকে সেখানে পান করানো হবে, ‘যানজাবীল’ মিশ্রিত পানপাত্র। এটা জান্নাতে অবস্থিত ‘সালসাবীল’ নামক একটি ঝর্ণা। আর তাদের কাছে আনাগোনা করবে চির কিশোরগণ। আপনি তাদেরকে দেখে মনে করবেন যেন বিক্ষিপ্ত মণি-মুক্তা। আপনি যখন সেখানে দেখবেন, তখন নিয়ামতরাজি ও বিশাল রাজ্য দেখতে পাবেন। তাদের পোশাক হবে চিকন সবুজ রেশম ও মোটা সবুজ রেশম এবং তাদেরকে পরিধান করানো হবে রৌপ্য নির্মিত কংকন এবং তাদের প্রতিপালক তাদেরকে পান করাবেন পবিত্র পানীয়। এটা তোমাদের প্রতিদান। তোমাদের আমল ও কাজ স্বীকৃতি লাভ করেছে।” (সূরা আদ-দাহর: ১২-২২)
জান্নাত সর্বাধিক মূল্যবান জিনিস। তাই তা সংগ্রহের আপ্রাণ ও জোরদার চেষ্টা চালানো উচিত। তাকওয়া মূলত: জান্নাত লাভের উপায় এবং তা অর্জনের জন্য বাস্তব চেষ্টা ও পরিশ্রমের বাস্তব প্রশিক্ষণ।
জাহান্নাম
চির দুঃখ-কষ্ট-পেরেশানী, লাঞ্ছনা-গঞ্জনা, অপমান, বিড়ম্বনা, দুর্ভাগ্য, লজ্জা-শরম, ক্ষুধা-পিপাসা, আগুন, অশান্তি, হতাশ-নিরাশা, চীৎকার-কান্নাকাটি, শাস্তি, অভিশাপ, আযাব-গযব ও অসন্তোষের স্থান হলো জাহান্নাম। শান্তির লেশমাত্রই সেখানে নেই। হাত-পা ও ঘাড়-গলা শিকলে বেঁধে বেড়ি পরিয়ে দলে দলে জাহান্নামের অতল গহবরে নিক্ষেপ করা হবে। যেখানে শুধু অতিবেশি তেজ ও দাহ্য শক্তিসম্পন্ন আগুন ছাড়া আর কিছু নেই। দোযখের অগ্নিশিখা তাদেরকে উপর, নীচ এবং ডান ও বাম থেকে স্পর্শ করবে, জ্বালাতে-পোড়াতে থাকবে। একবার চামড়া পুড়ে গেলে আবারো নুতন চামড়া গজাবে যেন বার বার আগুনের স্বাদ আস্বাদন করতে পারে। পিপাসায় প্রাণ পেটের নাড়ি-ভূঁমি গলে যাবে। এ হচ্ছে, আজাবের উপর আযাব। তাতে পিপাসা না কমে আরো তীব্র হবে। অতি দুর্গন্ধময় যাক্কুম এবং কাঁটাযুক্ত ঘাস ও গিসলিন হবে তাদের খাদ্য। ক্ষুধার তাড়নায় জঠর জ্বালায় তা ভক্ষণ করতে গেলে পেটের ভেতরে আরো যন্ত্রণা বাড়াবে। খাদ্য এবং পানীয় হবে আযাবের অন্যতম উপকরণ।
অতিশয় ঠান্ডা ও হিম প্রবাহ দ্বারাও আরেক প্রকার শাস্তি দেয়া হবে। বরফের চাইতে শত গুণ ঠান্ডা যামহারীরে তাদেরকে রাখা হবে। সে আযাব হবে করুণ। তারা শাস্তির মধ্যে মৃত্যু কামনা করবে, কিন্তু তা কবুল হবে না। নিরুপায় হয়ে জাহান্নাম থেকে বাইরে যেতে চাইবে। কিন্তু আজ তাদের কোন সাহায্যকারী নেই, নেই কোন সুপারিশকারী। নিশ্চয়ই আল্লাহ কঠিন শাস্তিদাতা।
জাহান্নাম হচ্ছে বিচিত্র রকমের অসহনীয় যাতনার বিশাল কারাগার। জাহান্নাম আজাবের কারণে দৈনিক অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ এমনকি দেহের মধ্যে অবস্থিত হৃৎপিন্ড, নাড়ী-ভূড়ি, শিরা-উপশিরা, অস্থিমজ্জা ইত্যাদি বিকৃতি ঘটবে কিন্তু সেই তীব্র যন্ত্রণা হতে মুক্তি পাবার অথবা পালিয়ে যাবার কোন রাস্তাও খোলা থাকবে না। মহান আল্লাহ বলেন:
﴿ وَمَآ أَدۡرَىٰكَ مَا سَقَرُ ٢٧ لَا تُبۡقِي وَلَا تَذَرُ ٢٨ لَوَّاحَةٞ لِّلۡبَشَرِ ٢٩ عَلَيۡهَا تِسۡعَةَ عَشَرَ ٣٠ ﴾ [المدثر: ٢٧، ٣٠]
“আর তুমি কি জানো, জাহান্নাম কি? তা শান্তিতে থাকতে দেয় না আবার ছেড়েও দেয় না। চামড়া ঝলসে দেয়। উনিশজন ফেরেশতা তার প্রহরী হবে।’’ (সূরা মুদ্দাসসির: ২৭-৩০)
অন্যত্র বলা হয়েছে:
﴿ ثُمَّ لَا يَمُوتُ فِيهَا وَلَا يَحۡيَىٰ ١٣ ﴾ [الاعلى: ١٣]
‘‘হে (জাহান্নামে) মরবেও না আবার জীবিতও থাকবে না।’’ (সূরা আ’লা: ১৩)
আরো বলা হয়েছে:
﴿ إِذَآ أُلۡقُواْ فِيهَا سَمِعُواْ لَهَا شَهِيقٗا وَهِيَ تَفُورُ ٧ تَكَادُ تَمَيَّزُ مِنَ ٱلۡغَيۡظِۖ ﴾ [الملك: ٧، ٨]
‘‘তারা (জাহান্নামীরা) যখন সেখানে নিক্ষিপ্ত হবে, তখন তার ক্ষিপ্রতার তর্জন-গর্জন শুনতে পাবে এবং তা উত্থাল-পাতাল করতে থাকবে, ক্রোধ আক্রোশে এমন অবস্থা ধারণ করবে, মনে হবে তা গোস্বায় ফেটে পড়বে।’’ (সূরা মুলক: ৭-৮)
﴿إِذَا رَأَتۡهُم مِّن مَّكَانِۢ بَعِيدٖ سَمِعُواْ لَهَا تَغَيُّظٗا وَزَفِيرٗا ١٢ وَإِذَآ أُلۡقُواْ مِنۡهَا مَكَانٗا ضَيِّقٗا مُّقَرَّنِينَ دَعَوۡاْ هُنَالِكَ ثُبُورٗا ١٣﴾ [الفرقان: ١٢، ١٣]
‘‘জাহান্নাম যখন দূর হতে তাদেরকে (জাহান্নামীদের)দেখতে পাবে তখন তারা তার ক্রোধ ও তেজস্বী আওয়াজ (অর্থাৎ তর্জন-গর্জন) শুনতে পাবে। আর যখন তাদেরকে হাত-পা বাধা অবস্থায় জাহান্নামের কোন সংকীর্ণ স্থানে নিক্ষেপ করা হবে তখন তারা সেখানে কেবল মৃত্যুকে ডাকতে থাকবে।’’ (সূরা ফুরকান: ১২-১৩)
সূরা নাবায়ে বলা হয়েছে:
﴿ إِنَّ جَهَنَّمَ كَانَتۡ مِرۡصَادٗا ٢١ لِّلطَّٰغِينَ مََٔابٗا ٢٢ لَّٰبِثِينَ فِيهَآ أَحۡقَابٗا ٢٣ ﴾ [النبا: ٢١، ٢٣]
‘‘নিশ্চয় জাহান্নাম একটি ঘাঁটি। আল্লাহদ্রোহীদের জন্য আশ্রয়স্থল। সেখানে তারা যুগ যুগ ধরে অবস্থান করবে।’’ (সূরা নাবা: ২১-২৩)
জাহান্নামের শ্রেণী বিন্যাস
মহান আল্লাহ বলেন,
﴿ لَهَا سَبۡعَةُ أَبۡوَٰبٖ لِّكُلِّ بَابٖ مِّنۡهُمۡ جُزۡءٞ مَّقۡسُومٌ ٤٤ ﴾ [الحجر: ٤٤]
‘‘জাহান্নামের সাতটি দরজা (স্তর) আছে। প্রত্যেকটি দরজার জন্য ভিন্ন ভিন্ন দল নির্ধারিত হয়েছে।’’ (সূরা আল-হিজর: ৪)
অর্থাৎ জাহান্নাম হচ্ছে পরলোকের এমন একটি বিশাল এলাকা যেখানে বিভিন্ন ধরনের শাস্তির জন্য ভিন্ন ভিন্ন এলাকা নির্ধারিত আছে। সেগুলোকে প্রধানত: সাত ভাগে ভাগ করা হয়েছে: যথা:
1) হাবিয়া।
2) জাহীম।
3) সাকার।
4) লাযা।
5) সাঈর।
6) হুতামাহ্ ।
7) জাহান্নাম।
বিভিন্ন স্তরে বিভিন্ন ধরনের অপরাধীরা শাস্তি ভোগ করবে। যেমন: কাফের, মুশরিক, ব্যভিচারী, সুদখোর, ঘুষখোর ইত্যাদি, সবার জন্যই ভিন্ন ভিন্ন স্তরে শাস্তি নির্দিষ্ট আছে। আবার প্রত্যেকটি স্তরের অনেকগুলো ঘাঁটি আছে। যথা:
গাছ্ছাক: একটি হ্রদ। যা জাহান্নামীগণের রক্ত, ঘাম ও পুঁজ ইত্যাদি প্রবাহিত হয়ে সেখানে জমা হবে।
গিছলিন: এটা হচ্ছে জাহান্নামীদের মল-মুত্র জমা হওয়ার স্থান। জাহান্নামীরা যখন খুব ক্ষুধা-তৃষ্ণা অনুভব করবে তখন উপরোক্ত দু’জায়গা হতে পানাহার করতে দেয়া হবে। তাছাড়া ‘তীনাতুল খাবাল’’ নামক বিষ ও পুঁজে পরিপূর্ণ আরেকটি কুপের কথাও হাদীসে উল্লেখ করা হয়েছে।
সাউদ: এটা তীনাতুল খবলের পাড়ে অবস্থিত একটি বিশাল পাহাড়।
এক শ্রেণীর জাহান্নামীদেরকে ঐ পাহাড়ের উপর উঠায়ে সজোরে ধাক্কা দিয়ে নিচে ফেলা হবে, পূণরায় উঠানো হবে এবং ফেলা হবে এভাবে শাস্তি দেয়া হবে।
ইরশাদ হচ্ছে:﴿ سَأُرۡهِقُهُۥ صَعُودًا ١٧ ﴾ [المدثر: ١٧] ‘‘সহসা-ই আমি তাকে সাউদ নামক পর্বতে চড়াবো।’’ (সূরা মুদ্দাসসির: ১৭)
যুববুল হযন: এটা জাহান্নামীদের আরেকটি ঘাঁট। এখানে রিয়াকার ও অহংকারী লোকদেরকে শাস্তি দেয়া হবে।
গাই: এটা জাহান্নামের মধ্যে সবচেয়ে ভয়ংকর জায়গা। কেননা ‘গাই’য়ের ভীতিজনক হুংকার শ্রবণে জাহান্নামের অন্যান্য স্থান প্রতিদিন ‘গাই’ হতে চারশত বার আশ্রয় প্রার্থনা করে।
আল্লাহ ও রাসূলের অস্বীকারকারীদের জন্য জাহান্নাম
ইরশাদ হচ্ছে:
﴿ وَلِلَّذِينَ كَفَرُواْ بِرَبِّهِمۡ عَذَابُ جَهَنَّمَۖ وَبِئۡسَ ٱلۡمَصِيرُ ٦ ﴾ [الملك: ٦]
‘‘যে সব লোক তাদের রবকে অস্বীকার ও অমান্য করেছে, তাদের জন্য রয়েছে জাহান্নাম। তা আবাসস্থল হিসেবে অত্যন্ত খারাপ জায়গা।’’ (সূরা মূলক: ৬)
মহান আল্লাহ বলেন,
﴿إِنَّ ٱلَّذِينَ كَفَرُواْ وَمَاتُواْ وَهُمۡ كُفَّارٌ أُوْلَٰٓئِكَ عَلَيۡهِمۡ لَعۡنَةُ ٱللَّهِ وَٱلۡمَلَٰٓئِكَةِ وَٱلنَّاسِ أَجۡمَعِينَ ١٦١ خَٰلِدِينَ فِيهَا لَا يُخَفَّفُ عَنۡهُمُ ٱلۡعَذَابُ وَلَا هُمۡ يُنظَرُونَ ١٦٢ ﴾ [البقرة: ١٦١، ١٦٢]
‘‘যারা কুফুরী করেছে এবং কাফের অবস্থাই মৃত্যুবরণ করেছে তাদের উপর আল্লাহর, ফেরেশতাদের ও সমস্ত মানুষের লা‘নত। এ অবস্থায় তারা (জাহান্নামে) অনন্তকাল অবস্থান করবে। তাদের শাস্তি কমানো হবে না অথবা অন্য কোন অবকাশ দেয়া হবে না।’’ (সূরা আল-বাকারা: ১৬১-১৬২)
﴿ إِنَّآ أَعۡتَدۡنَا لِلۡكَٰفِرِينَ سَلَٰسِلَاْ وَأَغۡلَٰلٗا وَسَعِيرًا ٤ ﴾ [الانسان: ٤]
‘‘আমরা কাফেরদের(আল্লাহ ও রাসূলের অস্বীকারকারী) জন্য শিকল, কণ্ঠকড়া ও দাউ দাউ করে জ্বলা আগুন প্রস্তুত করে রেখেছি।’’ (সূরা দাহর: ৪)
অন্যত্র বলা হয়েছে, যারা কুফুরী করবে তাদের জান্নাতে যাওয়া ততোখানি অসম্ভব যতোখানি অসম্ভব সূচের ছিদ্রের ভেতর দিয়ে উষ্ট্র প্রবেশ করা।
আল-কুরআনে বলা হয়েছে:
﴿ إِنَّ ٱلَّذِينَ كَذَّبُواْ بَِٔايَٰتِنَا وَٱسۡتَكۡبَرُواْ عَنۡهَا لَا تُفَتَّحُ لَهُمۡ أَبۡوَٰبُ ٱلسَّمَآءِ وَلَا يَدۡخُلُونَ ٱلۡجَنَّةَ حَتَّىٰ يَلِجَ ٱلۡجَمَلُ فِي سَمِّ ٱلۡخِيَاطِۚ وَكَذَٰلِكَ نَجۡزِي ٱلۡمُجۡرِمِينَ ٤٠ لَهُم مِّن جَهَنَّمَ مِهَادٞ وَمِن فَوۡقِهِمۡ غَوَاشٖۚ وَكَذَٰلِكَ نَجۡزِي ٱلظَّٰلِمِينَ ٤١ ﴾ [الاعراف: ٤٠، ٤١]
‘‘যারা আমার আয়াতগুলোকে মিথ্যা মনে করে অস্বীকার করেছে এবং বিদ্রোহীর ভূমিকা অবলম্বন করেছে, তাদের জন্য আসমানের দরজা কখনো খোলা হবে না। তাদের জান্নাতে প্রবেশ করা ততোখানি অসম্ভব যতোখানি অসম্ভব সূচের ছিদ্রের ভেতন দিয়ে উষ্ট্র প্রবেশ। অপরাধীদের জন্য প্রতিফলন এমন হওয়াই উচিত। তাদের জন্য আগুনের শয্যা ও চাদর নির্দিষ্ট আছে। আমরা জালেমদেরকে এরকম প্রতিফলনই দিয়ে থাকি।’’ (সূরা আ‘রাফ: ৪০-৪১)
জ্বিন, মানুষ ও পাথর জাহান্নামের ইন্ধন হবে
মহান আল্লাহ বলেন,
﴿ وَلَقَدۡ ذَرَأۡنَا لِجَهَنَّمَ كَثِيرٗا مِّنَ ٱلۡجِنِّ وَٱلۡإِنسِۖ لَهُمۡ قُلُوبٞ لَّا يَفۡقَهُونَ بِهَا وَلَهُمۡ أَعۡيُنٞ لَّا يُبۡصِرُونَ بِهَا وَلَهُمۡ ءَاذَانٞ لَّا يَسۡمَعُونَ بِهَآۚ أُوْلَٰٓئِكَ كَٱلۡأَنۡعَٰمِ بَلۡ هُمۡ أَضَلُّۚ أُوْلَٰٓئِكَ هُمُ ٱلۡغَٰفِلُونَ ١٧٩ ﴾ [الاعراف: ١٧٩]
‘‘আমরা জাহান্নামের জন্য বহু জ্বীন ও মানুষ পয়দা করেছি। তাদের কাছে দিল রয়েছে কিন্তু তারা তা দিয়ে চিন্তা ভাবনা করে না। তাদের চোখ আছে তবুও তারা দেখেনা, তাদের কান আছে কিন্তু তা দিয়ে তারা শুনেনা, তারা জন্তু জানোয়ারের মতো বরং তার চেয়েও নিকৃষ্ট। এরাই গাফেলদের অন্তর্ভুক্ত।
সূরা বাকারায় বলা হয়েছে:
﴿ فَٱتَّقُواْ ٱلنَّارَ ٱلَّتِي وَقُودُهَا ٱلنَّاسُ وَٱلۡحِجَارَةُۖ أُعِدَّتۡ لِلۡكَٰفِرِينَ ٢٤ ﴾ [البقرة: ٢٤]
‘‘তোমরা জাহান্নামের ঐ আগুনকে ভয় কর যার ইন্ধন হবে মানুষ ও পাথর। যা কাফেরদের জন্য তৈরী করা হয়েছে।’’ (সূরা আল-বাকারা:২৪)
সূরা তাহরীমে শুধু ভয় করার কথাই বলা হয়নি বরং বাঁচার কার্যকরী পথ অনুসন্ধানের কথা বলা হয়েছে। ইরশাদ হচ্ছে:
﴿ يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ قُوٓاْ أَنفُسَكُمۡ وَأَهۡلِيكُمۡ نَارٗا وَقُودُهَا ٱلنَّاسُ وَٱلۡحِجَارَةُ عَلَيۡهَا مَلَٰٓئِكَةٌ غِلَاظٞ شِدَادٞ لَّا يَعۡصُونَ ٱللَّهَ مَآ أَمَرَهُمۡ وَيَفۡعَلُونَ مَا يُؤۡمَرُونَ ٦ ﴾ [التحريم: ٦]
‘‘হে ঈমানদারগণ! নিজেকে এবং স্বীয় পরিবারবর্গকে সে আগুন হতে রক্ষা করো যার ইন্ধন হবে মানুষ ও পাথর। সেখানে অত্যন্ত কর্কশ, রূঢ় ও নির্মম স্বভাবের ফেরেশতা নিয়োজিত থাকবে। যারা কখনো আল্লাহর আদেশ অমান্য করে না। যে হুকুমই তাদেরকে দেয়া হোক না কেনো তা ঠিক ঠিক ভাবে পালন করে।’’ (সূরা আত-তাহরীম:৬)
এখন প্রশ্ন হতে পারে মানুষ ও জ্বীনকে আগুনে জ্বালানো হবে এটা যুক্তিসংগত। কারণ তাদেরকে জ্ঞান-বুদ্ধি দিয়েছেন এবং তার প্রয়োগের স্বাধীনতাও দিয়েছেন কিন্তু পাথরতো জড়ো পদার্থ, তাদেরকে কেন পূড়ানো হবে?
এর উত্তর হচ্ছে, দু’টি কারণে পাথরকে পোড়ানো হবে।
এক: যেহেতু মুশরিকগণ পাথরের মুর্তি তৈরি করে তার পূজা-আর্চনা করে এবং বলে যে, এরা আমাদেরকে সেদিন সুপারিশ করে বাঁচিয়ে দেবে। তাই তাদেরকে দেখিয়ে দেখিয়ে তাদের সাথেই সে সব পাথরের মূর্তিগুলোকে পুড়ানো হবে। যেনো মুশরিকগণ বুঝতে পারে ঐ সব পাথর নিজেকে রক্ষা করার সামর্থ পর্যন্ত রাখে না কাজেই কি করে তাদের মুক্তির জন্য সুপারিশ করতে পারে।
দুই: আগুনে পাথর পুড়ালে আগুনের তাপমাত্রা আরও বহুগুণ বেড়ে যায়। তাই যেহেতু কাফেরদেরকে কঠিন শাস্তি দেয়াই আল্লাহর ফায়সালা তাই আগুনের তাপমাত্রা বাড়ানোর জন্যই পাথর পুড়ানো হবে। (এ ব্যাপারে আল্লাহই ভালো জানেন)।
জাহান্নাম কাকে আহবান করবে?
এরশাদ হচ্ছে:
﴿تَدۡعُواْ مَنۡ أَدۡبَرَ وَتَوَلَّىٰ ١٧ وَجَمَعَ فَأَوۡعَىٰٓ ١٨ ﴾ [المعارج: ١٧، ١٨]
জাহান্নাম সেই ব্যক্তিকে আহবান করবে, যে সত্য ও সুন্দর থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিলো এবং তা থেকে পালিয়ে বেড়াচ্ছিলো। আর যে ধন-সম্পদ (আল্লাহর পথে ব্যয় না করে) জমা করতো এবং তা আকঁড়ে ধরে থাকতো।’’ (সূরা মা‘আরিজ: ১৭-১৮)।
তাফসীরে ইবনে কাসীরে এ আয়াতের ব্যাখায় বলা হয়েছে: বন্য প্রাণী যেমনিভাবে তার খাদ্য অনুসন্ধান করে নেয় ঠিক তেমনিভাবে জাহান্নাম হাশরের ময়দান থেকে দুষ্ট লোকদেরকে এক এক করে খুঁজে নেবে।
অবশ্য অন্য হাদীসে আছে- সেদিন জাহান্নামের সত্তর হাজার লাগাম থাকবে এবং প্রতিটি লাগাম ৭০ হাজার করে ফেরেশতা ধরে রাখবে। (মুসলিম, ২৮৪২)
জাহান্নামীদেরকে গ্রাস করে জাহান্নাম তৃপ্ত হবে না
ইরশাদ হচ্ছে:
﴿ يَوۡمَ نَقُولُ لِجَهَنَّمَ هَلِ ٱمۡتَلَأۡتِ وَتَقُولُ هَلۡ مِن مَّزِيدٖ ٣٠ ﴾ [ق: ٣٠]
‘‘আমি সেদিন (জাহান্নামীদেরকে ভর্তি করার পর) জাহান্নামকে জিজ্ঞেস করবো: তুমি কি পরিপূর্ণ হয়ে গিয়েছো? জাহান্নাম বলবে: আরো আছে কি?’’ (সূরা ক্বাফ: ৩০)
নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহওিয়া সাল্লাম বলেছেন:
‘‘জাহান্নামে জাহান্নামীদেরকে অনবরত ফেলা হবে। আর জাহান্নাম বলতে থাকবে, আরো আছে কি? সমস্ত জাহান্নামীদেরকে নিক্ষেপ করার পরও জাহান্নাম পরিতৃপ্ত হবে না। তখন আল্লাহ তা’আলা জাহান্নামের মধ্যে তাঁর কুদরতী কদম রাখবেন। ফলে জাহান্নাম সংকোচিত হয়ে যাবে। আর বলতে থাকবে: ব্যস, ব্যস। আপনার ইয্যত ও অনুগ্রহের শপথ করে বলছি। আমার আর প্রয়োজন নেই। (বুখারী, ৪৮৪৮)
জাহান্নামীরা ভয়াবহ আজাবের সম্মুখীন হবে
মহান আল্লাহ বলেন,
﴿ خُذُوهُ فَغُلُّوهُ ٣٠ ثُمَّ ٱلۡجَحِيمَ صَلُّوهُ ٣١ ثُمَّ فِي سِلۡسِلَةٖ ذَرۡعُهَا سَبۡعُونَ ذِرَاعٗا فَٱسۡلُكُوهُ ٣٢ ﴾ [الحاقة: ٣٠، ٣٢]
(নিদের্শ দেয়া হবে) ধরো এবং গলায় ফাঁস লাগিয়ে দাও। অতঃপর জাহান্নামে নিক্ষেপ করো। আর সত্তর হাত দীর্ঘ শিকল দিয়ে ভালোভাবে বেধে দাও।’’ (সূরা আল হাক্কাহ: ৩১-৩৫)
সূরা মুরসালাতে বলা হয়েছে:
﴿ ٱنطَلِقُوٓاْ إِلَىٰ ظِلّٖ ذِي ثَلَٰثِ شُعَبٖ ٣٠ لَّا ظَلِيلٖ وَلَا يُغۡنِي مِنَ ٱللَّهَبِ ٣١ إِنَّهَا تَرۡمِي بِشَرَرٖ كَٱلۡقَصۡرِ ٣٢ ﴾ [المرسلات: ٣٠، ٣٢]
‘‘(জাহান্নামীদের বলা হবে) চলো, সে ছায়ার দিকে যা তিনটি শাখা বিশিষ্ট। যেখানে না (শীতল) ছায়া আছে আর না আগুনের লেলিহান শিখা হতে রক্ষাকারী কোন বস্তু। সে আগুন প্রাসাদের ন্যায় বিরাট স্ফুলিঙ্গ নিক্ষেপ করবে। তা এমনভাবে লাফাতে থাকবে, দেখলে মনে হবে যেন হলুদ বর্ণের উট।’’ (সূরা মুরসালাত: ৩০-৩৩)
অন্যত্র বলা হয়েছে:
﴿ إِذِ ٱلۡأَغۡلَٰلُ فِيٓ أَعۡنَٰقِهِمۡ وَٱلسَّلَٰسِلُ يُسۡحَبُونَ ٧١ فِي ٱلۡحَمِيمِ ثُمَّ فِي ٱلنَّارِ يُسۡجَرُونَ ٧٢ ﴾ [غافر: ٧١، ٧٢]
‘‘যখন তাদের গলায় শিকল ও জিঞ্জির লাগানো হবে, তখন তা ধরে টগবগ করে ফুটন্ত পানি দিয়ে টানা হবে এবং পরে জাহান্নামের আগুনে নিক্ষেপ করা হবে।’’ (সূরা আল-মুমিন: ৭১-৭২)
﴿وَإِنَّ لِلطَّٰغِينَ لَشَرَّ مََٔابٖ جَهَنَّمَ يَصۡلَوۡنَهَا فَبِئۡسَ ٱلۡمِهَادُ ٥٦ هَٰذَا فَلۡيَذُوقُوهُ حَمِيمٞ وَغَسَّاقٞ ٥٧ وَءَاخَرُ مِن شَكۡلِهِۦٓ أَزۡوَٰجٌ﴾ [ص: ٥٥، ٥٨]
‘‘আর খোদাদ্রোহী লোকদের নিকৃষ্ট পরিণতি হচ্ছে জাহান্নাম। সেখানে তারা (অনন্তকাল) জ্বলবে। এটা অত্যন্ত খারাপ স্থান। প্রকৃতপক্ষে এ তাদের জন্যেই। অতএব সেখানে তারা স্বাধ গ্রহণ করবে টগবগ করা ফুটন্ত পানি, ফুঁজ, রক্ত এবং এ ধরনের আরো অনেক কষ্টের। ’’ (সূরা সাদ: ৫৫-৫৮)
﴿ يُصَبُّ مِن فَوۡقِ رُءُوسِهِمُ ٱلۡحَمِيمُ ١٩ يُصۡهَرُ بِهِۦ مَا فِي بُطُونِهِمۡ وَٱلۡجُلُودُ ٢٠ وَلَهُم مَّقَٰمِعُ مِنۡ حَدِيدٖ ٢١ كُلَّمَآ أَرَادُوٓاْ أَن يَخۡرُجُواْ مِنۡهَا مِنۡ غَمٍّ أُعِيدُواْ فِيهَا وَذُوقُواْ عَذَابَ ٱلۡحَرِيقِ ٢٢ ﴾ [الحج: ١٩، ٢٢]
‘‘তাদের (জাহান্নামীদের)মাথার উপরে তীব্র গরম পানি ঢেলে দেয়া হবে, ফলে তাদের পেটের মধ্যে অবস্থিত সকল বস্তু ও চামড়া (সাথে সাথে) গলে যাবে এবং তাদের জন্য লোহার ডান্ডা থাকবে। যখনই তারা স্বাসবোধন অবস্থান জাহান্নাম হতে বের হবার চেষ্টা করবে তখনই তাদেরকে প্রতিহত করা হবে এবং বলা হবে দহনের শাস্তি ভোগ করতে থাক।’’ (সূরা হজ্জ: ১৯-২২)
পুজ পান করানো হবে
প্রচন্ড শাস্তির কারণে জাহান্নামীদের ক্ষুধা-পিপাসা মারাত্মক হবে। তারা কেবল খাইতে চাইবে। যা দেয়া হবে তাই খাবে ও পান করবে। তাদেরকে পুজ ও রক্ত মিশ্রিত পানি পান করতে দেয়া হবে। আল্লাহ বলেন:
﴿مِّن وَرَآئِهِۦ جَهَنَّمُ وَيُسۡقَىٰ مِن مَّآءٖ صَدِيدٖ ١٦ يَتَجَرَّعُهُۥ وَلَا يَكَادُ يُسِيغُهُۥ﴾ [ابراهيم: ١٦، ١٧]
“তার সামনে দোযখ রয়েছে। তাতে পুজ ও রক্ত মিশ্রিত পানি পান করানো হবে। ঢোক গিলে তা পান করবে এবং গলার ভেতরে প্রবেশ করাতে কমই পারবে।” (সূরা ইব্রাহীম: ১৬-১৭)
আগুনের পোশাক, গরম পানি ও লোহার হাতুড়ি দিয়ে শাস্তি দেয়া হবে
দোযখীদের শাস্তি বহুমুখী। আল্লাহ বলেন:
﴿فَٱلَّذِينَ كَفَرُواْ قُطِّعَتۡ لَهُمۡ ثِيَابٞ مِّن نَّارٖ يُصَبُّ مِن فَوۡقِ رُءُوسِهِمُ ٱلۡحَمِيمُ ١٩ يُصۡهَرُ بِهِۦ مَا فِي بُطُونِهِمۡ وَٱلۡجُلُودُ ٢٠ وَلَهُم مَّقَٰمِعُ مِنۡ حَدِيدٖ ٢١ كُلَّمَآ أَرَادُوٓاْ أَن يَخۡرُجُواْ مِنۡهَا مِنۡ غَمٍّ أُعِيدُواْ فِيهَا وَذُوقُواْ عَذَابَ ٱلۡحَرِيقِ ٢٢ ﴾ [الحج: ١٩، ٢٢]
‘যারা কাফের, তাদের জন্য আগুনের পোষাক তৈরি করা হয়েছে। তাদের মাথার উপা ফুটন্ত পানি ঢেলে দেয়া হবে। ফলে তাদের পেটে যা আছে, তা এবং চামড়া গলে বের হয়ে যাবে। তাদের জন্য আছে লোহার হাতুড়ি। তারা যখনই যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ হয়ে জাহান্নাম থেকে বের হতে চাইবে, তখনই তাদেরকে তাতে ফিরিয়ে দেয়া হবে। বলা হবে: দহন শাস্তি ভোগ কর।’
কুরআনে বর্ণিত ‘দোযখের ৭টি দরজার’ তাফসীর প্রসঙ্গে ‘আতা বলেন, এ দরজাগুলো ভীষণ দুঃখ-কষ্ট ও কঠিন বিপদ-মুসীবতে ভরা। যারা জানা সত্ত্বেও যেনা করেছে, তাদের নিকৃষ্টতম পচা দুর্গন্ধে এগুলো দুর্গন্ধময় হয়ে থাকবে।
দোযখীদেরকে যেনাকারীদের যৌনাঙ্গ থেকে নি:সৃত পচা-দুর্গন্ধযুক্ত পানীয় পান করানো হবে
মাকহুল দামেশকী বলেন, দোযখীরা খুব পচা দুর্গন্ধ পেয়ে বলবে, এর চাইতে বেশি দুর্গন্ধ আমরা আর কখনও পাইনি। তাদেরকে বলা হবে, এটা যেনাকারীদের লজ্জাস্থানের পচা দুর্গন্ধ।
জাহান্নামে জুববুল হোযন নামক এক উপত্যকায় খচ্চরের মতো বিরাট বিচ্ছু যেনাকারীকে দংশন করতে থাকবে। প্রতি দংশনে এক হাজার বছর পর্যন্ত বিষের যন্ত্রণা ভোগ করতে থাকবে। তারপর গোশত খসে পড়বে এবং জননেন্দ্রিয় থেকে পুজ বের হবে।
বেনামাযীকে জাহান্নামের মালহাম নামক অঞ্চলের উটের ঘাড়ের মতো মোটা এবং প্রায় এক মাসের পথের সমান লম্বা বিষধর সাপ দংশন করতে থাকবে। প্রতি দংশনের বিষ ৭০ বছর পর্যন্ত যন্ত্রণা দেবে, এবপর গোশত খসে পড়বে।
যারা সোনা-রূপার যাকাত দেয় না, সেগুলোকে জাহান্নামের আগুনে উত্তপ্ত করে তাদের কপালে, পিঠ ও পার্শ্বে শেক দিয়ে বলা হবে, এখন তোমরা তোমাদের জমাকৃত সম্পদের মজা ভোগ করো।
এছাড়াও সুদখোর, মিথ্যুক, নিন্দুক, চোর-ডাকাত, জালেম-অত্যাচারী, অন্যের অধিকার নষ্টকারী, মা-বাপের অবাধ্য ও তাদেরকে কষ্টদানকারী সন্তানের জন্যও বহু আযাব রয়েছে। এখানে শুধু দু’একটা দলের আযাবের সামান্য ইঙ্গিত দেয়া হলো।
জাহান্নামের গভীরতা অনেক
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন,
كُنَّا مَعَ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، إِذْ سَمِعَ وَجْبَةً، فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «تَدْرُونَ مَا هَذَا؟» قَالَ: قُلْنَا: اللهُ وَرَسُولُهُ أَعْلَمُ، قَالَ: «هَذَا حَجَرٌ رُمِيَ بِهِ فِي النَّارِ مُنْذُ سَبْعِينَ خَرِيفًا، فَهُوَ يَهْوِي فِي النَّارِ الْآنَ، حَتَّى انْتَهَى إِلَى قَعْرِهَا»
আমরা একদিন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কাছে বসা। তিনি একটি শব্দ শুনলেন। তিনি জিজ্ঞেস করেন, তোমরা কি জান এটা কিসের শব্দ? আমরা জবাবে বললাম, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলই সর্বাধিক ভাল জানেন। তিনি বলেন, ৭০ বছর আগে, জাহান্নামে একটি পাথর নিক্ষেপ করা হয়েছিল, এখন তা এর তলদেশে গিয়ে পড়েছে। (মুসলিম, ২৮৪৪)।
উপরে ও নীচে আগুনের ছাতা
জাহান্নামীদের নীচে ও উপরে এবং ডানে ও বামে আগুন ছাড়া আর কিছু নেই। তারা এ আগুনে দগ্ধ হতে থাকবে। আল্লাহ বলেন:
﴿لَهُم مِّن فَوۡقِهِمۡ ظُلَلٞ مِّنَ ٱلنَّارِ وَمِن تَحۡتِهِمۡ ظُلَلٞۚ ﴾[الزمر: ١٦]
‘তাদের জন্য উপর দিক এবং নীচের দিক থেকে আগুনের ছাতা থাকবে। ( সূরা যুমার: ১৬)
জাহান্নামীদের আকার আকৃতির বিস্তৃতি ঘটিয়ে আজাব দেয়া হবে
পৃথিবীর মতো এতো সুন্দর চেহারা বা আকার আকৃতি জাহান্নামীদের থাকবে না। সেদিন তাদের চেহারাকে বিকৃতি ও কুৎসিত করে দেয়া হবে।
ইরশাদ হচ্ছে:
﴿ وَٱلَّذِينَ كَسَبُواْ ٱلسَّئَِّاتِ جَزَآءُ سَيِّئَةِۢ بِمِثۡلِهَا وَتَرۡهَقُهُمۡ ذِلَّةٞۖ مَّا لَهُم مِّنَ ٱللَّهِ مِنۡ عَاصِمٖۖ كَأَنَّمَآ أُغۡشِيَتۡ وُجُوهُهُمۡ قِطَعٗا مِّنَ ٱلَّيۡلِ مُظۡلِمًاۚ ﴾ [يونس: ٢٧]
‘‘যারা খারাপ কাজ করবে তাদের পরিণতিও অনুরূপ খারাপ হবে। অপমান লাঞ্চনা তাদেরকে আবন্ধ করে রাখবে। আর আল্লাহর আজাব থেকে কেউ তাদেরকে রক্ষা করবে না। তাদের মুখমন্ডল যেন তমসাচ্ছন্ন রাতের তিমিরে আচ্ছাদিত।’’ (সূরা ইউনুস: ২৭)
অন্যত্র বলা হয়েছে:
﴿ تَلۡفَحُ وُجُوهَهُمُ ٱلنَّارُ وَهُمۡ فِيهَا كَٰلِحُونَ ١٠٤ ﴾ [المؤمنون: ١٠٤]
‘‘আগুন তাদের মুখ মন্ডলকে চেটেচেটে খাবে এবং তাদের চেহারাগুলো হবে বীভৎস।’’ (সূরা মুমিনুন: ১০৪)
জাহান্নামের শাস্তির যে ধরন, তা পুরোপুরি অনুভব করতে হলে দৈহিক আকার আকৃতির পরিবর্তনের প্রয়োজন, এটা স্বাভাবিক জ্ঞান ও বুদ্ধির দাবী। আকার আকৃতি যতো বড়ো হয় শাস্তির তীব্রতাও ততো বেশি অনুভূত হয়। যেমন একটি মশাকে কোনো কঠিন শাস্তি দেয়া যায় না, কিন্তু একটি বিড়াল, ছাগল অথবা তার চেয়ে বড়ো কোন প্রাণীকে ইচ্ছেমতো যে কোন শাস্তি দেয়া যায়। ঠিক তেমনিভাবে আল্লাহও পাপীদেররকে আকার আকৃতি বৃদ্ধি করে দেবেন, যেনো আল্লাহর শাস্তি পুরোপুরি ভোগ করতে পারে।
গায়ের চামড়া পরিবর্তন করে জ্বালানো হবে
আল্লাহ বলেন:
﴿ كَلَّآۖ إِنَّهَا لَظَىٰ ١٥ نَزَّاعَةٗ لِّلشَّوَىٰ ١٦ ﴾ [المعارج: ١٥، ١٦]
‘কখনই নয়। নিশ্চয় এটা লেলিহান অগ্নি। যা চামড়া তুলে নেবে। (সূরা মা’আরেজ: ১৫-১৬)
﴿ كُلَّمَا نَضِجَتۡ جُلُودُهُم بَدَّلۡنَٰهُمۡ جُلُودًا غَيۡرَهَا لِيَذُوقُواْ ٱلۡعَذَابَۗ إِنَّ ٱللَّهَ كَانَ عَزِيزًا حَكِيمٗا ٥٦ ﴾ [النساء: ٥٦]
‘‘যখন তাদের দেহের চামড়া আগুনে পুড়ে পুড়ে গলে যাবে, তখন (সাথে সাথে) সেখানে অন্য চামড়া সৃষ্টি করে দেবো; যেনো তারা আজাবের স্বাদ পুরোপুরি গ্রহণ করতে পারে। বস্তুত আল্লাহ বড়োই শক্তিশালী এবং নিজের ফায়সালা সমূহ কার্যকরী করার কৌশল খুব ভালো করেই জানেন।’’ (সূরা নিসা: ৫৬)
চামড়া পরিবর্তন করা হচ্ছে এবং পুড়ে যাচ্ছে, পুনরায় আবার তা তৈরী হচ্ছে এ অনুভুতি কখনো জাহান্নামীদের থাকবে না। কেননা (পৃথিবীতে) যদি কোন বস্তু প্রতি সেকেন্ডে দশবার পর্যন্ত পরিবর্তন হয় তবে তা আমরা উপলব্ধি করতে পারি। কিন্তু কোন বস্তু যদি প্রতি সেকেন্ডে দশবারের বেশী পরিবর্তন হয়, তবে তা আমরা উপলব্ধি করতে পারি না। বরং ঐ বস্তুকে স্থির দেখি। যেমন বিদ্যুৎ এর বাতি। বিদ্যুৎ প্রতি সেকেন্ডে পঞ্চাশ বার দিক পরিবর্তন করে অর্থাৎ একটি বাতি জ্বলা অবস্থায় দেখি, কারণ যেহেতু সেকেন্ডে দশবারের বেশি দিক পরিবর্তন হচ্ছে তাই আমরা বাতিকে স্থির দেখি। তদ্রুপ জাহান্নামীদেরকে প্রতি সেকেন্ডে কয়েকশবার চামড়া পরিবর্তন করা হবে, কিন্তু জাহান্নামীগণ মনে করবে, সেই পুরানো চামড়াই শরীরে আছে এবং তা অবিরাম পুড়ে চলছে।
জাহান্নামীরা ছায়ার মধ্যে থাকবে
﴿ فِي سَمُومٖ وَحَمِيمٖ ٤٢ وَظِلّٖ مِّن يَحۡمُومٖ ٤٣ لَّا بَارِدٖ وَلَا كَرِيمٍ ٤٤ ﴾ [الواقعة: ٤٢، ٤٤]
‘‘তারা গরম বাষ্প, টগবগ করা ফুটন্ত পানি এবং কালো ধুঁয়ার ছায়ার মধ্যে থাকবে। তা (কখনো না ঠান্ডা হবে, না শান্তি দায়ক)’’। (সূরা ওয়াকি‘আহ্: ৪২-৪৫)
পূর্বেই বলা হয়েছে যে, কালো বর্ণের আগুনে জাহান্নামীদেরকে নিক্ষেপ করা হবে। তাই যখন তারা সেখানে প্রবেশ করবে তখন চারদিকে অসহ্য তাপ ও ধুয়ার মতো ঘোলাটে অন্ধকার দেখবে। এ অবস্থার কথাই উপরোক্ত আয়াতে বলা হয়েছে।
জাহান্নামীদের খাদ্য ও পানীয়
যাক্কুম বৃক্ষ হবে খাদ্য এবং ফুটন্ত পানি শরীরের উপর ঢেলে দেয়া হবে
ক্ষুধার জ্বালায় জান বেরিয়ে যাবে। তখন তারা খাদ্য চাইবে। কিন্তু খাদ্য তো দেয়া হবে না, দেয়া হবে অখাদ্য। যেটা পাবে সেটাই চাইবে। এ মর্মে আল্লাহ বলেন:
﴿ إِنَّ شَجَرَتَ ٱلزَّقُّومِ ٤٣ طَعَامُ ٱلۡأَثِيمِ ٤٤ كَٱلۡمُهۡلِ يَغۡلِي فِي ٱلۡبُطُونِ ٤٥ كَغَلۡيِ ٱلۡحَمِيمِ ٤٦ خُذُوهُ فَٱعۡتِلُوهُ إِلَىٰ سَوَآءِ ٱلۡجَحِيمِ ٤٧ ثُمَّ صُبُّواْ فَوۡقَ رَأۡسِهِۦ مِنۡ عَذَابِ ٱلۡحَمِيمِ ٤٨ ﴾ [الدخان: ٤٣، ٤٨]
‘নিশ্চয়ই যাক্কুম বৃক্ষ পাপীর খাদ্য হবে। গলিত তামার মতো পেটে ফুটতে থাকবে। যেমন পাটি ফুটে। একে ধর এবং টেনে নিয়ে যাও জাহান্নামের মধ্যস্থলে। তারপর তার মাথার উপর ফুটন্ত পানির আযাব ঢেলে দাও। (সূরা দোখান: ৪৩-৪৮)
আরও বলেন,
﴿ ثُمَّ إِنَّ لَهُمۡ عَلَيۡهَا لَشَوۡبٗا مِّنۡ حَمِيمٖ ٦٧ ﴾ [الصافات: ٦٧]
‘‘অতঃপর পান করার জন্য তাদের ফুটন্ত পানি দেয়া হবে।’’ (সূরা ছাফ্ফাত: ৬৭)
অন্যত্র বলা হয়েছে:
﴿لَأٓكِلُونَ مِن شَجَرٖ مِّن زَقُّومٖ ٥٢ فَمَالُِٔونَ مِنۡهَا ٱلۡبُطُونَ ٥٣ فَشَٰرِبُونَ عَلَيۡهِ مِنَ ٱلۡحَمِيمِ ٥٤ فَشَٰرِبُونَ شُرۡبَ ٱلۡهِيمِ ﴾ [الواقعة: ٥٢، ٥٥]
‘‘অবশ্যই তারা যাক্কুম গাছের খাদ্য খাবে। ওগুলোর দ্বারাই পেট ভর্তি করবে। আর উপর হতে টগবগ করে ফুটন্ত পানি পিপাসা কাতর উটের ন্যায় পান করবে।’’ (সূরা ওয়াকি‘আহ্: ৫২-৫৩)
যাক্কুম, Cactus জাতীয় গাছ। আরবের তিহামা অঞ্চলে এ গাছ জন্মে। এর স্বাধ তিক্ত এবং গন্ধ অসহ্য। ঐ গাছ ভাঙ্গলে দুধের মতো সাদা কস বের হয়, যা গায়ে লাগলে সাথে সাথে ফোস্কা পড়ে ঘা হয় এবং গা ফুলে উঠে। আগেই বলা হয়েছে পৃথিবীর সাথে আখিরাতের কোন বস্তুর নামের মিল থাকলেও মুলত ঐ দুই বস্তু এক নয়। পৃথিবীর যাক্কুম গাছের তুলনায় আখিরাতের যাক্কুম আরও নিকৃষ্ট। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন:
«لَوْ أَنَّ قَطْرَةً مِنَ الزَّقُّومِ قُطِرَتْ فِي دَارِ الدُّنْيَا لَأَفْسَدَتْ عَلَى أَهْلِ الدُّنْيَا مَعَايِشَهُمْ، فَكَيْفَ بِمَنْ يَكُونُ طَعَامَهُ؟»
“যদি যাক্কুমের এক বিন্দু পৃথিবীতে পড়ে তবে তা সারা বিশ্বের প্রাণীকুলের আহার্য বস্তুকে বিকৃত করে ফেলবে।’’ (মুসনাদে আহমাদ: ১/৩০০)
সুতরাং এক ফোটা যাক্কুম যদি পৃথিবীর নদ-নদীতে ফেলা হয়, তবে তা পৃথিবী বাসীর সমস্ত খাদ্য দ্রব্যকে পয়মাল করে দেবে।
যাক্কুম গাছের সংজ্ঞা দিতে গিয়ে আল্লাহ বলেন:
﴿ إِنَّهَا شَجَرَةٞ تَخۡرُجُ فِيٓ أَصۡلِ ٱلۡجَحِيمِ ٦٤ طَلۡعُهَا كَأَنَّهُۥ رُءُوسُ ٱلشَّيَٰطِينِ ٦٥ ﴾ [الصافات: ٦٤، ٦٥]
‘তা এমন একটি গাছ যা জাহান্নামের তলদেশ হতে বের হয়। তার ছড়াগুলি এমন, যেনো শয়তানগুলোর মাথা?’’
‘‘শয়তানগুলোর মাথা’’ এ কথাটি একটি দৃষ্টান্ত। যেমন আমরা কারো চেহারা বিবর্ণ দেখলে বলি একেবারে পেত্মীর মতো দেখতে। ঠিক এমনি একটি দৃষ্টান্ত হচ্ছে শয়তানের মাথার দৃষ্টান্ত। এ যে অত্যন্ত অরুচিকর, অখাদ্য, কুখাদ্য তা বুঝানোই হচ্ছে উক্ত আয়াতের অভিপ্রায়।
সূরা গাশিয়ায় বলা হয়েছে:
﴿تُسۡقَىٰ مِنۡ عَيۡنٍ ءَانِيَةٖ ٥ لَّيۡسَ لَهُمۡ طَعَامٌ إِلَّا مِن ضَرِيعٖ ٦ لَّا يُسۡمِنُ وَلَا يُغۡنِي مِن جُوعٖ ٧ ﴾ [الغاشية: ٥، ٧]
‘‘তাদেরকে ফুটন্ত কুপের পানি পান করানো হবে। কাটা যুক্ত শুস্ক ঘাস ছাড়া আর কোন খাদ্য তাদের জন্য থাকবে না। তার দেহের পুষ্টি সাধন করবে না এবং তাতে ক্ষুধারও উপশম হবে না।’’ (সুরা গাশিয়া: ৫-৭)
সে পানি শুধুমাত্র গরম ও ফুটন্তই হবে না বরং তা তামা বা কঠিন কোন ধাতুকে তাপ প্রয়োগে তরল করা হলে, সেই উত্তপ্ত তরলের মতো হবে।
ইরশাদ হচ্ছে:
﴿وَإِن يَسۡتَغِيثُواْ يُغَاثُواْ بِمَآءٖ كَٱلۡمُهۡلِ يَشۡوِي ٱلۡوُجُوهَۚ بِئۡسَ ٱلشَّرَابُ وَسَآءَتۡ مُرۡتَفَقًا ٢٩ ﴾ [الكهف: ٢٩]
‘‘তারা পানির আকাংখা করলে গলিত ধাতুর ন্যায় পানি সরবরাহ করা হবে। যা তাদের মুখমন্ডলকে ঝলসে দেবে। এটা কতো নিকৃষ্ট পানীয় এবং জাহান্নাম কতোই না নিকৃষ্ট স্থান।’’ (সূরা কাহারু: ১৯)
আরো বলা হয়েছে,
﴿ فَقَطَّعَ أَمۡعَآءَهُمۡ ١٥ ﴾ [محمد: ١٥]
‘‘সে পানি পান করা মাত্র) তা তাদের নাড়ি ভূড়িকে ছিন্ন ভিন্ন করে দেবে।’’ (সূরা মুহাম্মদ: ১৫)
﴿ لَّا يَذُوقُونَ فِيهَا بَرۡدٗا وَلَا شَرَابًا ٢٤ إِلَّا حَمِيمٗا وَغَسَّاقٗا ٢٥ ﴾ [النبا: ٢٤، ٢٥]
‘‘ সেখানে ঠান্ডা ও পানোপযোগী কোন বস্তুর স্থান তারা পাবে না। যদিও বা কিছু পায় তা হচ্ছে উত্তপ্ত গরম পানি ও দুর্গন্ধযুক্ত মিশ্রিত রক্ত। (সূরা নাবা: ২৪-২৫)
সূরা ইব্রাহীমে বলা হয়েছে:
﴿وَيُسۡقَىٰ مِن مَّآءٖ صَدِيدٖ ١٦ يَتَجَرَّعُهُۥ وَلَا يَكَادُ يُسِيغُهُۥ وَيَأۡتِيهِ ٱلۡمَوۡتُ مِن كُلِّ مَكَانٖ وَمَا هُوَ بِمَيِّتٖۖ ١٧ ﴾ [ابراهيم: ١٦، ١٧]
“আর গলিত পুঁজ পান করানো হবে যা সে অতিকষ্টে গলধ:করণ করবে এবং তা গলধ:করণ প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়বে। চতুর্দিক থেকে মৃত্যু যন্ত্রণা তাকে গ্রাস করে নেবে কিন্তু তবুও তার মৃত্যু হবে না।’’ (সূরা ইব্রাহীম: ১৬-১৭)
নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: ‘‘যদি সেই দুর্গন্ধময় পুজ এক বালতি পৃথিবীতে ফেলে দেয়া হতো তবে তা গোটা পৃথিবীকে দুর্গন্ধ অতিষ্ঠ করে তুলতো।’’ (তিরমিযি, ২৫৮৪; মুসনাদে আহমাদ, ৩/২৮)
জাহান্নামীরা জান্নাতীদের নিকট খাদ্য ও পানীয় চাবে
﴿ وَنَادَىٰٓ أَصۡحَٰبُ ٱلنَّارِ أَصۡحَٰبَ ٱلۡجَنَّةِ أَنۡ أَفِيضُواْ عَلَيۡنَا مِنَ ٱلۡمَآءِ أَوۡ مِمَّا رَزَقَكُمُ ٱللَّهُۚ قَالُوٓاْ إِنَّ ٱللَّهَ حَرَّمَهُمَا عَلَى ٱلۡكَٰفِرِينَ ٥٠ ﴾ [الاعراف: ٥٠]
‘‘জাহান্নামীরা জান্নাতীদেরকে ডেকে বলবে, আমাদেরকে সামান্য পানি দাও কিংবা আল্লাহ তোমাদেরকে যে রিজিক দিয়েছেন তা হতে কিছু আমাদের দিকে নিক্ষেপ করে দাও। জবাবে জান্নাতীগণ বলবে: আল্লাহ তা’আলা এ দুটো বস্তুই কাফেরদের জন্য হারাম করে দিয়েছেন।’’ (সূরা আ’রাফ: ৫০)
উল্লেখিত আয়াত হতে প্রমাণিত হয় যে, পৃথিবী যেমন স্থান কাল ও পাত্রের দ্বারা সীমাবদ্ধ কিন্তু আখিরাত স্থান-কালের সীমাবদ্ধতার উর্দ্বে। কেননা জান্নাতের পরিধি যেমন বিশাল ঠিক তেমনিভাবে জাহান্নামের পরিধিও বিশাল। তবুও এ দুপ্রান্ত থেকে একজন অপরজনের অবস্থা অবলোকন করতে পারবে এবং পরস্পর কথাও বলবে, তাতে তাদের দৃষ্টিপাত বা কণ্ঠস্বরে কোন ব্যাঘাত সৃষ্টি হবে না।
জাহান্নামীরা আফসোস করবে
তারা জাহান্নামের কঠোর আযাব দেখে আফসোস করে বলবে:
﴿ ٱلۡمُلۡكُ يَوۡمَئِذٍ ٱلۡحَقُّ لِلرَّحۡمَٰنِۚ وَكَانَ يَوۡمًا عَلَى ٱلۡكَٰفِرِينَ عَسِيرٗا ٢٦ وَيَوۡمَ يَعَضُّ ٱلظَّالِمُ عَلَىٰ يَدَيۡهِ يَقُولُ يَٰلَيۡتَنِي ٱتَّخَذۡتُ مَعَ ٱلرَّسُولِ سَبِيلٗا ٢٧ يَٰوَيۡلَتَىٰ لَيۡتَنِي لَمۡ أَتَّخِذۡ فُلَانًا خَلِيلٗا ٢٨ لَّقَدۡ أَضَلَّنِي عَنِ ٱلذِّكۡرِ بَعۡدَ إِذۡ جَآءَنِيۗ وَكَانَ ٱلشَّيۡطَٰنُ لِلۡإِنسَٰنِ خَذُولٗا ٢٩ ﴾ [الفرقان: ٢٥، ٢٨]
সেদিন সত্যিকার রাজত্ব হবে দয়াময় আল্লাহর এবং কাফেরদের পক্ষে দিনটি হবে কঠিন। জালেম সেদিন আপন হাত দুটো দংশন করতে করতে বলবে, হায়! আফসুস, আমি যদি রাসূলের পথ অনুসরণ করতাম। হায়! আমি যদি অমুককে বন্ধু না বানাতাম। সে আমার কাছে উপদেশ আসার পরই আমাকে তা থেকে বিভ্রান্ত করেছে। শয়তান মানুষকে বিপদকালে ধোঁকা দেয়। (সূরা ফোরকান:২৬-২৯)
জাহান্নামের আযাব স্থায়ী
আল্লাহ বলেন,
﴿إِنَّ ٱلۡمُجۡرِمِينَ فِي عَذَابِ جَهَنَّمَ خَٰلِدُونَ ٧٤ ﴾ [الزخرف: ٧٤]
‘অপরাধীরা জাহান্নামের আযাবে চিরস্থায়ী অবস্থান করবে।’ (সূরা যুখরুফ: ৭৪)
আবু মুসা আশ‘আরী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
«إِنَّ أَهْلَ النَّارِ لَيَبْكُونَ حَتَّى لَوْ أُجْرِيَتِ السُّفُنُ فِي دُمُوعِهِمْ لَجَرَتْ، وَإِنَّهُمْ لَيَبْكُونَ الدَّمَ يَعْنِي مَكَانَ الدَّمْعِ»
জাহান্নামবাসীরা কাঁদতে থাকবে। তাদের চোখের পানিতে জাহাজ ভাসাতে চাইলে ভাসানো যাবে। তাদের চোখ থেকে অশ্রুর বদলে রক্ত বেরুবে। [হাকেম (৪/৬৪৮), হাদীসের সনদ সহীহ, আল্লামা যাহাবী ও আলবানী একে সহীহ হাদীস বলেছেন]
শিকলে বেঁধে দাহ্য আলকাতরার জামা পরানো হবে
অপরাধীদের শাস্তি কঠিন। আল্লাহ বলেন,
﴿وَتَرَى ٱلۡمُجۡرِمِينَ يَوۡمَئِذٖ مُّقَرَّنِينَ فِي ٱلۡأَصۡفَادِ ٤٩ سَرَابِيلُهُم مِّن قَطِرَانٖ وَتَغۡشَىٰ وُجُوهَهُمُ ٱلنَّارُ ﴾ [ابراهيم: ٤٩، ٥٠]
“তুমি ঐ দিন পাপীদেরকে পরস্পরে শৃঙ্খলাবদ্ধ দেখবে। তাদের জামা হবে দাহ্য আলকাতরার এবং তাদের মুখমন্ডলকে আগুন আচ্ছন্ন করে ফেলবে।” (সূরা ইব্রাহীম: ৪৯-৫০)
জাহান্নামীদেরকে যখন ফেরেশতারা এক হাতে চুলের মুঠি এবং অন্য হাতে পা ধরে চ্যাংদোলা করে জাহান্নামে নিক্ষেপ করতে নিয়ে যাবে, তখন জাহান্নামের পাহারাদারগণ জিজ্ঞেস করবে: তোমাদের কাছে কি কোন সুসংবাদ দাতা এবং ভীতি প্রদর্শনকারী পৌছেনি? তখন কাফেরগণ বলবে: হ্যাঁ, পৌঁছেছিল কিন্তু আমরা তাদেরকে ঠাট্টা বিদ্রুপ করতাম এবং মিথ্যা মনে করতাম। তখন আফসোস করবে এবং বলবে:
﴿ وَقَالُواْ لَوۡ كُنَّا نَسۡمَعُ أَوۡ نَعۡقِلُ مَا كُنَّا فِيٓ أَصۡحَٰبِ ٱلسَّعِيرِ ١٠ ﴾ [الملك: ١٠]
‘‘হায়! আমরা যদি শুনতাম এবং অনুধান (জ্ঞান দিয়ে চিন্তা ভাবনা) করতাম, তবে আমরা আজ দাউ দাউ করে জ্বলা আগুনে নিক্ষিপ্ত লোকদের মধ্যে শামিল হতাম না।’’ সূরা মূলক: ১০)
সূরা আনআমে বলা হয়েছে:
﴿وَلَوۡ تَرَىٰٓ إِذۡ وُقِفُواْ عَلَى ٱلنَّارِ فَقَالُواْ يَٰلَيۡتَنَا نُرَدُّ وَلَا نُكَذِّبَ بَِٔايَٰتِ رَبِّنَا وَنَكُونَ مِنَ ٱلۡمُؤۡمِنِينَ ٢٧ ﴾ [الانعام: ٢٧]
‘‘হায়! সে সময়ের অবস্থা যদি তুমি দেখতে পারতে, যখন তাদেরকে জাহান্নামের কিনারায় দাঁড় করানো হবে; তখন তারা বলবে: হায়! আমরা যদি দুনিয়ায় আবার ফিরে যেতে পারতাম এবং সেখানে আল্লাহর আয়াততে মিথ্যা মনে না করতাম, আর ঈমানদার লোকদের মধ্যে শামিল হতে পারতাম!’’ (সূরা আনআম: ২৭)
তাদের এ আবেদন নিবেদন ব্যর্থ হয়ে যাবে। আল্লাহ সরাসরি তাদের কথাকে প্রত্যাখান করবেন। ইরশাদ হচ্ছে:
﴿وَلَوۡ رُدُّواْ لَعَادُواْ لِمَا نُهُواْ عَنۡهُ وَإِنَّهُمۡ لَكَٰذِبُونَ ٢٨ ﴾ [الانعام: ٢٨]
‘‘তাদেরকে যদি পূর্ববর্তী জীবনের দিকে ফিরিয়েও দেয়া হয়,তবুও তারা সে সব কাজই করবে যা হতে তাদেরকে নিষেধ করা হয়েছে। তারা তো সবচেয়ে বড়ো মিথ্যাবাদী।’’ (সূরা আনআম: ২৮)
সূরা যুমারে বলা হয়েছে,
﴿وَسِيقَ ٱلَّذِينَ كَفَرُوٓاْ إِلَىٰ جَهَنَّمَ زُمَرًاۖ حَتَّىٰٓ إِذَا جَآءُوهَا فُتِحَتۡ أَبۡوَٰبُهَا وَقَالَ لَهُمۡ خَزَنَتُهَآ أَلَمۡ يَأۡتِكُمۡ رُسُلٞ مِّنكُمۡ يَتۡلُونَ عَلَيۡكُمۡ ءَايَٰتِ رَبِّكُمۡ وَيُنذِرُونَكُمۡ لِقَآءَ يَوۡمِكُمۡ هَٰذَاۚ قَالُواْ بَلَىٰ وَلَٰكِنۡ حَقَّتۡ كَلِمَةُ ٱلۡعَذَابِ عَلَى ٱلۡكَٰفِرِينَ ٧١ ﴾ [الزمر: ٧١]
‘‘যে সব লোক কুফরী করেছিলো তাদেরকে জাহান্নামের দিকে দলে দলে তাড়িয়ে নিয়ে যাওয়া হবে। তারা যখন সেখানে পৌঁছাবে তখন তার (অর্থাৎ জাহান্নামের) দরজাগুলো খুলা হবে এবং তার কর্মচারীরা তাদেরকে বলবে: তোমাদের নিকট তোমাদের নিজেদের মধ্যে এমন কোন রাসূল কি আসেনি, যে তোমাদেরকে তোমাদের রবের আয়াতসমূহ শুনিয়েছে এবং তোমাদেরকে এ বলে ভয় প্রদর্শন করেছেন যে, এ দিনটি অবশ্যই একদিন তোমাদেরকে দেখতে হবে?’’ তারা বলবে: ‘‘হ্যাঁ এসেছিলো! কিন্তু আজাব হওয়ার ফায়সালা কাফেরদের ভাগ্যলিপি হয়ে গিয়েছে।’’ (সূরা যুমার: ৭১)
মানুষ যখন হতাশ ও পেরেশান হয়ে যায় তখনই তার মুখ দিয়ে হতবাক কথা বের হয়। উপরোক্ত দৃষ্টান্তটি তার নমুনা।
দুনিয়ার আগুন থেকে জাহান্নামের আগুনের তেজ ৭০ গুন বেশি
আবু হোরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
«نَارُكُمْ جُزْءٌ مِنْ سَبْعِينَ جُزْءًا مِنْ نَارِ جَهَنَّمَ»، قِيلَ يَا رَسُولَ اللَّهِ إِنْ كَانَتْ لَكَافِيَةً قَالَ: «فُضِّلَتْ عَلَيْهِنَّ بِتِسْعَةٍ وَسِتِّينَ جُزْءًا كُلُّهُنَّ مِثْلُ حَرِّهَا»
“তোমাদের দুনিয়ার আগুন, জাহান্নামের আগুনের ৭০ ভাগের ১ ভাগ। তাঁকে প্রশ্ন করা হলো, এটা কি যথেষ্ট নয়? তিনি উত্তরে বলেন: এর সাথে আরো ৬৯ গুন যোগ করা হবে এবং প্রত্যেকটির গুণ এ আগুনের মতো।” (বুখারী, ৩২৬৫ ও মুসলিম, ২৮৪৩)
নিম্নতম শাস্তি প্রাপ্ত ব্যক্তি
নোমান ইবন বাশীর থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
«إِنَّ أَهْوَنَ أَهْلِ النَّارِ عَذَابًا يَوْمَ القِيَامَةِ لَرَجُلٌ، تُوضَعُ فِي أَخْمَصِ قَدَمَيْهِ جَمْرَةٌ، يَغْلِي مِنْهَا دِمَاغُهُ»
“সবচাইতে কম সাজাপ্রাপ্ত জাহান্নামী ব্যক্তি হলো যার দুটো জুতার মধ্যে আগুনের দুটো ফিতা থাকবে। তা মাথার মগজকে এমনভাবে টগবগিয়ে সিদ্ধ করতে থাকবে যেন পাতিলে সিদ্ধ করা হয়। সে মনে করবে, তার চাইতে এত কঠিন আযাব আর কেউ ভোগ করছে না। অথচ, সেটা হলো সবচেয়ে কম আযাব।” [বুখারী, ৬৫৬১; মুসলিম, ২১৩]
সামুরা ইবন জুনদুব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
«إِنَّ مِنْهُمْ مَنْ تَأْخُذُهُ النَّارُ إِلَى كَعْبَيْهِ، وَمِنْهُمْ مَنْ تَأْخُذُهُ إِلَى حُجْزَتِهِ، وَمِنْهُمْ مَنْ تَأْخُذُهُ إِلَى عُنُقِهِ»
“আগুন কাউকে ছোট গিরা পর্যন্ত, কাউকে হাঁটু পর্যন্ত, কাউকে কোমর পর্যন্ত এবং কাউকে কাঁধ পর্যন্ত ঢেকে নেবে।” (মুসলিম, ২৮৪৫)
জাহান্নামের অধিকাংশ অধিবাসী নারী
উসামা ইবন যায়েদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত,
«اطَّلَعْتُ فِي الجَنَّةِ فَرَأَيْتُ أَكْثَرَ أَهْلِهَا الفُقَرَاءَ، وَاطَّلَعْتُ فِي النَّارِ فَرَأَيْتُ أَكْثَرَ أَهْلِهَا النِّسَاءَ»
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: ‘‘আমি জান্নাতের গেটে দাঁড়িয়ে দেখলাম, এর অধিকাংশ অধিবাসী গরীব-মিসকীন। ধনীরা আটকা পড়েছে। জাহান্নামীদেরকে জাহান্নামে প্রবেশ করানোর পর আমি জাহান্নামের গেটে দাঁড়িয়ে দেখলাম, তাদের অধিকাংশই নারী।’ (বুখারী, ৩২৪১ ও মুসলিম, ২৭৩৭)
জাহান্নামীদের দাঁত ওহোদ পাহাড়সম চামড়ার ঘনত্ব এবং দুই ঘাড়ের ব্যবধান তিন দিনের পথের দূরত্বের সমান
আবু হোরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
«ضِرْسُ الْكَافِرِ، أَوْ نَابُ الْكَافِرِ، مِثْلُ أُحُدٍ وَغِلَظُ جِلْدِهِ مَسِيرَةُ ثَلَاثٍ»
“(জাহান্নামে) কাফেরের দাঁত হবে ওহোদ পাহাড় সমান এবং চামড়ার ঘনত্ব হবে তিন দিনের পথের দূরত্বের সমান।” (মুসলিম, ২৮৫১)
অপরাধীরা পৃথিবীতে ফিরে আসতে চাইবে
কুরআনে এসেছে,
﴿ قَالُواْ رَبَّنَآ أَمَتَّنَا ٱثۡنَتَيۡنِ وَأَحۡيَيۡتَنَا ٱثۡنَتَيۡنِ فَٱعۡتَرَفۡنَا بِذُنُوبِنَا فَهَلۡ إِلَىٰ خُرُوجٖ مِّن سَبِيلٖ ١١ ﴾ [غافر: ١١]
‘‘তারা বলবে হে আমাদের রব! তুমি নিশ্চয়ই আমাদেরকে দু’বার মৃত্যু ও তার জীবন দান করেছো। এখন আমরা আমাদের অপরাধসমূহ স্বীকার করি। এখন (জাহান্নাম) থেকে বের হবার কোন পথ আছে কি?’’ (সূরা আল মু’মিন: ১১)
দু’বার মৃত্যু এবং দু’বার জীবন দান অর্থ-মানুষ অস্তিত্বহীন ছিলো অর্থাৎ মৃত্যু ছিলো, আল্লাহ জীবন দান করেছেন। আবার মৃত্যু দেবেন এবং পুণরায় কিয়ামতের দিন জীবিত করে উঠাবেন। এ কথা কয়টি স্বয়ং আল্লাহ রাববুল আলামীন সূরা বাকারায় স্পষ্ট করে বলেছেন:
﴿ كَيۡفَ تَكۡفُرُونَ بِٱللَّهِ وَكُنتُمۡ أَمۡوَٰتٗا فَأَحۡيَٰكُمۡۖ ثُمَّ يُمِيتُكُمۡ ثُمَّ يُحۡيِيكُمۡ ثُمَّ إِلَيۡهِ تُرۡجَعُونَ ٢٨ ﴾ [البقرة: ٢٨]
‘‘তোমরা আল্লাহর সাথে কেমন করে কুফুরী করতে পারো। অথচ তোমরা ছিলে প্রাণহীন-মৃত্যু, তিনি তোমাদের জীবন দান করেছেন। আবার মৃত্যু দেবেন এবং পুণরায় জীবন দান করে উঠাবেন। তারপর তার দিকেই তোমাদের ফিরে যেতে হবে।’’ (সূরা বাকারা: ২৮)
অপরাধীরা প্রথম তিনটি অবস্থা অবিশ্বাস করতো না, কেননা এ তিনটি অবস্থা তাদের চোখের সামনেই ঘটতো। কিন্তু শেষাবস্থা তারা প্রত্যক্ষ করতে পারে নি বলে উপহাস করে উড়িয়ে দিতো। কেননা শেষ অবস্থার খবর একমাত্র নবী রাসূলগণই দিয়েছেন। কিয়ামতের দিন কার্যত যখন এ অবস্থা ঘটে যাবে তখন তারা স্বীকার করবে এবং কাকুতি মিনতি করবে পৃথিবীতে পুণরায় ফিরে আসার জন্য।
সূরা ফাতির এ বলা হয়েছে:
﴿ وَهُمۡ يَصۡطَرِخُونَ فِيهَا رَبَّنَآ أَخۡرِجۡنَا نَعۡمَلۡ صَٰلِحًا غَيۡرَ ٱلَّذِي كُنَّا نَعۡمَلُۚ﴾ [فاطر: ٣٧]
‘‘সেখানে (জাহান্নামে) তারা চিৎকার করে বলবে: হে আমাদের রব! আমাদেরকে এখান হতে বের করে নাও, যেনো আমরা নেক আমল করতে পারি। সে আমল থেকে ভিন্নতর যা আমরা পূর্বে করছিলাম।’’ (সূরা ফাতির: ৩৭)
অতঃপর তাদেরকে প্রতি উত্তরে বলা হবে:
﴿ أَوَ لَمۡ نُعَمِّرۡكُم مَّا يَتَذَكَّرُ فِيهِ مَن تَذَكَّرَ وَجَآءَكُمُ ٱلنَّذِيرُۖ فَذُوقُواْ فَمَا لِلظَّٰلِمِينَ مِن نَّصِيرٍ ٣٧ ﴾ [فاطر: ٣٧]
‘‘আমরা কি তোমাদেরকে এমন বয়স দান করিনি যে,শিক্ষা গ্রহণ করতে চাইলে শিক্ষা গ্রহণ করতে পারতে? আর তোমাদের নিকট সতর্ককারীও এসেছিলো। এখন (আজাবের) স্বাদ গ্রহণ করো। এখানে জালিমদের কোন সাহায্যকারী নেই।’’ (সূরা ফাতির: ৩৭)
আত্মীয় স্বজন ও দুনিয়ার সব মানুষকে বিনিময় দিয়ে হলেও জাহান্নামীরা বাঁচতে চাবে
﴿ يَوَدُّ ٱلۡمُجۡرِمُ لَوۡ يَفۡتَدِي مِنۡ عَذَابِ يَوۡمِئِذِۢ بِبَنِيهِ ١١ وَصَٰحِبَتِهِۦ وَأَخِيهِ ١٢ وَفَصِيلَتِهِ ٱلَّتِي تُٔۡوِيهِ ١٣ وَمَن فِي ٱلۡأَرۡضِ جَمِيعٗا ثُمَّ يُنجِيهِ ﴾ [المعارج: ١١، ١٤]
‘‘সেদিন অপরাধীরা চাবে তার সন্তান, স্ত্রী, ভাই এবং সাহায্যকারী নিকটবর্তী পরিবার এমনকি দুনিয়ার সব মানুষকে বিনিময় দিয়ে হলেও নিজেকে আজাব থেকে বাঁচিয়ে দিতে।’’ (সূরা আল মা‘আরিজ: ১১-১৪)
সূরা আল-মু’মিনে বলা হয়েছে:
﴿فَلَآ أَنسَابَ بَيۡنَهُمۡ يَوۡمَئِذٖ وَلَا يَتَسَآءَلُونَ ١٠١ ﴾ [المؤمنون: ١٠١]
‘‘তখন তাদের মধ্যে আর কোন আত্মীয়তা থাকবে না, এমনকি পরস্পর দেখা হলেও (কেউ কাউকে) জিজ্ঞেস করবে না।’’ (সূরা আল মু’মিনুন: ১০১)
অন্যত্র বলা হয়েছে:
﴿ وَلَا يَسَۡٔلُ حَمِيمٌ حَمِيمٗا ١٠ ﴾ [المعارج: ١٠]
‘‘সেদিন কোন প্রাণের বন্ধু অপর প্রাণের বন্ধুকে জিজ্ঞেসও করবে না।’’ (সূরা আল মা‘আরিজ: ১০)
প্রত্যেক জাহান্নামী দল পূর্ববর্তী দলকে দোষ দেবে
﴿كُلَّمَا دَخَلَتۡ أُمَّةٞ لَّعَنَتۡ أُخۡتَهَاۖ حَتَّىٰٓ إِذَا ٱدَّارَكُواْ فِيهَا جَمِيعٗا قَالَتۡ أُخۡرَىٰهُمۡ لِأُولَىٰهُمۡ رَبَّنَا هَٰٓؤُلَآءِ أَضَلُّونَا فََٔاتِهِمۡ عَذَابٗا ضِعۡفٗا مِّنَ ٱلنَّارِۖ قَالَ لِكُلّٖ ضِعۡفٞ وَلَٰكِن لَّا تَعۡلَمُونَ ٣٨ ﴾ [الاعراف: ٣٨]
‘‘প্রত্যেকটি দল যখনই জাহান্নামে প্রবেশ করবে, নিজের সঙ্গের দলটির উপর অভিশাপ দিতে দিতে অগ্রসর হবে। শেষ পর্যন্ত সকলেই যখন সেখানে সমবেত হবে, তখন (প্রত্যেক) পরবর্তী লোক পূর্ববর্তী লোকদের সম্পর্কে বলবে: হে আমাদের রব! এ লোকরাই আমাদের বিভ্রান্ত করেছে। এখন তাদেরকে আগুনে (আমাদের চেয়ে) দ্বিগুন শাস্তি দাও।
আল্লাহ বলবেন: ‘‘সকলের জন্যই দ্বিগুণ আজাব কিন্তু তোমরা তা বুঝবে না।’’ (সূরা আ’রাফ: ৩৮)
সকলের জন্য দ্বিগুণ আজাব এ কথার তাৎপর্য হচ্ছে: অপরাধীরা সর্বদাই নিজে অপকর্ম করে এবং আমাদের করতে উৎসাহ দেয়। যেহেতু প্রতিটি অপকর্মই বাহ্যিক চাকচিক্যেময়ই তাই তাদের উৎসাহে বিপুল সংখ্যক লোক সাড়া দেয়। আবার তাদের দেখাদেখি পরবর্তীতে আরেক দল অপরাধপ্রবণ হয়ে যায়। এমনি করে ধারাবাহিকভাবে একের পর এক অপরাধীদের দল কিয়ামত পর্যন্ত বৃদ্ধি পেতে থাকে। সত্যি কথা বলতে কি,প্রত্যেকটি দলই পূর্ববর্তী দলকে অনুসরণ করেই অপরাধ প্রবণতায় জড়িয়ে পড়ে এবং অপরাধী হিসেবে চিহ্নিত হয়। তাই আল্লাহ রাব্বুল আলামীন প্রত্যেক দলকেই দ্বিগুণ শাস্তি দেবেন। কারণ একদিকে যেমন তারা পূর্ববর্তী দলের অনুসারী অপরদিকে তারা তাদের পরবর্তী দলের পথ প্রদর্শক।
এ কথাগুলোই আল্লাহ পবিত্র কালামে অন্যভাবে বলেছেন:
﴿ٱللَّهُ وَلِيُّ ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ يُخۡرِجُهُم مِّنَ ٱلظُّلُمَٰتِ إِلَى ٱلنُّورِۖ وَٱلَّذِينَ كَفَرُوٓاْ أَوۡلِيَآؤُهُمُ ٱلطَّٰغُوتُ يُخۡرِجُونَهُم مِّنَ ٱلنُّورِ إِلَى ٱلظُّلُمَٰتِۗ ٢٥٧ ﴾ [البقرة: ٢٥٧]
‘‘আল্লাহ ঈমানদারদের বন্ধু! তিনি তাদেরকে অন্ধকার হতে আলোর দিকে পথ দেখান এবং কাফেরদের বন্ধু তাগুত (অর্থাৎ আল্লাহদ্রোহী শক্তি) তারা তাদেরকে আলো থেকে অন্ধকারের দিকে পথ দেখায়।’’ (সূরা বাকারা: ২৫৭)
অনুসারীগণ নেতাদের শাস্তি দাবী করবে:
﴿وَقَالُواْ رَبَّنَآ إِنَّآ أَطَعۡنَا سَادَتَنَا وَكُبَرَآءَنَا فَأَضَلُّونَا ٱلسَّبِيلَا۠ ٦٧ رَبَّنَآ ءَاتِهِمۡ ضِعۡفَيۡنِ مِنَ ٱلۡعَذَابِ وَٱلۡعَنۡهُمۡ لَعۡنٗا كَبِيرٗا ٦٨ ﴾ [الاحزاب: ٦٧، ٦٨]
‘‘(যখন জাহান্নামীদেরকে আগুণে পুড়ানো হবে) তখন তারা বলবে: হে আমাদের রব! আমরা আমাদের সরদার ও নেতাদের আনুগত্য করেছি, তারা আমাদেরকে সঠিক সরল পথ থেকে বিভ্রান্ত করে দিয়েছে। হে রব! এ লোকদেরকে দ্বিগুণ শাস্তি দাও এবং তাদের উপর কঠিন অভিশাপ বর্ষণ করো।’’ (সূরা আহযাব: ৬৭-৬৮)
জাহান্নামীরা জাহান্নামে জ্বলতে জ্বলতে অসহ্য হয়ে যাবে। তখন চিৎকার করে বলতে থাকবে:
﴿ وَقَالَ ٱلَّذِينَ كَفَرُواْ رَبَّنَآ أَرِنَا ٱلَّذَيۡنِ أَضَلَّانَا مِنَ ٱلۡجِنِّ وَٱلۡإِنسِ نَجۡعَلۡهُمَا تَحۡتَ أَقۡدَامِنَا لِيَكُونَا مِنَ ٱلۡأَسۡفَلِينَ ٢٩ ﴾ [فصلت: ٢٩]
‘‘হে পরোয়ারদেগার! সেই জ্বিন ও মানুষদেরকে আমাদের সামনে এনে দাও, যারা আমাদেরকে গোমরাহ করছিলো। আমরা তাদেরকে আমাদের পায়ের তলায় রেখে দলিত মথিত করবো, যেনো তারা লাঞ্চিত ও অপমানিত হয়।’’ (সূরা হা-মীম-আস সিজদাহ: ২৯)
জাহান্নামীদের অনুভুতি তীব্র হবে। তারা তাদের ভুল বুঝতে পারবে এবং সেদিন বুঝবে অন্ধভাবে নেতাদের অনুসরণ করা কতো বড় ভ্রান্তনীতি ছিলো। আল্লাহ বলেন
﴿تَٱللَّهِ إِن كُنَّا لَفِي ضَلَٰلٖ مُّبِينٍ ٩٧ إِذۡ نُسَوِّيكُم بِرَبِّ ٱلۡعَٰلَمِينَ ٩٨ ﴾ [الشعراء: ٩٧، ٩٨]
‘‘(আর এই বিভ্রান্ত লোকেরা নিজেদের নেতাদেরকে লক্ষ্য করে বলবে) আল্লাহর কসম! আমরা তো সুস্পষ্ট গোমরাহীতে নিমজ্জিত ছিলাম, যখন তোমাদেরকে রাববুল আলামীনের মর্যাদা দিচ্ছিলেন।’’ (সূরা শু‘আরা: ৯৭-৯৮)
সূরা বাকারায় বলা হয়েছে:
﴿ إِذۡ تَبَرَّأَ ٱلَّذِينَ ٱتُّبِعُواْ مِنَ ٱلَّذِينَ ٱتَّبَعُواْ وَرَأَوُاْ ٱلۡعَذَابَ وَتَقَطَّعَتۡ بِهِمُ ٱلۡأَسۡبَابُ ١٦٦ وَقَالَ ٱلَّذِينَ ٱتَّبَعُواْ لَوۡ أَنَّ لَنَا كَرَّةٗ فَنَتَبَرَّأَ مِنۡهُمۡ كَمَا تَبَرَّءُواْ مِنَّاۗ كَذَٰلِكَ يُرِيهِمُ ٱللَّهُ أَعۡمَٰلَهُمۡ حَسَرَٰتٍ عَلَيۡهِمۡۖ وَمَا هُم بِخَٰرِجِينَ مِنَ ٱلنَّارِ ١٦٧ ﴾ [البقرة: ١٦٦، ١٦٧]
যখন জাহান্নামে শাস্তি দেয়া হবে তখন এসব নেতা ও প্রধান ব্যক্তিরা দুনিয়ায় যাদের অনুসরণ করা হতো, (তারা) তাদের অনুসারীদের সাথে সম্পর্কহীনতা প্রকাশ করতে থাকবে কিন্তু তবুও শাস্তি তারা পাবেই। এবং তাদের সমস্ত উপায় উপকরণের ধারা ছিন্ন হয়ে যাবে। আর যেসব লোক দুনিয়ায় তাদের অনুসারী ছিলো, তারা বলতে থাকবে: ‘‘হায়! যদি আমাদেরকে আরেকবার সুযোগ দেয়া হতো, তবে এরা আজ যেভাবে আমাদের সাথে সম্পর্কচ্ছেদ করেছে, তেমনি আমরাও এদের সাথে সম্পর্কচ্ছেদ করে দেখিয়ে দিতাম। এভাবেই দুনিয়ায় এরা যে সমস্ত কাজ করেছে সেগুলো আল্লাহ তাদের সামনে এমনভাবে উপস্থিত করবেন যাতে তারা কেবল দুঃখ ও আক্ষেপই করতে থাকবে। কিন্তু জাহান্নামের আগুন থেকে বের হবার কোন পথই তারা খুঁজে পাবে না।’’ (সূরা বাকারা: ১৬৬-১৬৭)
সেখানে সবর করা না করা সমান হবে
﴿ يَوۡمَ يُدَعُّونَ إِلَىٰ نَارِ جَهَنَّمَ دَعًّا ١٣ هَٰذِهِ ٱلنَّارُ ٱلَّتِي كُنتُم بِهَا تُكَذِّبُونَ ١٤ أَفَسِحۡرٌ هَٰذَآ أَمۡ أَنتُمۡ لَا تُبۡصِرُونَ ١٥ ٱصۡلَوۡهَا فَٱصۡبِرُوٓاْ أَوۡ لَا تَصۡبِرُواْ سَوَآءٌ عَلَيۡكُمۡۖ إِنَّمَا تُجۡزَوۡنَ مَا كُنتُمۡ تَعۡمَلُونَ ١٦ ﴾ [الطور: ١٣، ١٦]
‘যেদিন তাদেরকে ধাক্কা মেরে মেরে জাহান্নামের দিতে নিয়ে যাওয়া হবে, তখন তাদেরকে বলা হবে এই সে আগুন যাকে তোমরা ভিত্তিহীন গুজব মনে করেছিলে। এবার বলো, এটা কি যাদু? না তোমরা কিছুই দেখানো? এবার যাও এর মধ্যে ভষ্ম হতে থাকো। এখন তোমরা ধৈর্য ধারণ করো যা না করো, সবই তোমাদের জন্য সমান। তোমাদেরকে সে রকম প্রতিফলই দেয়া হচ্ছে যা তোমরা আমল করেছে।’’ (সূরা তুর: ১৩-১৬)
সূরা হাদীদে বলা হয়েছে:
যখন ফেরেশতাগণ জাহান্নামীদেরকে জাহান্নামের দিকে তাড়িয়ে নিয়ে যাবে, তখন বলবে:
﴿فَٱلۡيَوۡمَ لَا يُؤۡخَذُ مِنكُمۡ فِدۡيَةٞ وَلَا مِنَ ٱلَّذِينَ كَفَرُواْۚ مَأۡوَىٰكُمُ ٱلنَّارُۖ هِيَ مَوۡلَىٰكُمۡۖ وَبِئۡسَ ٱلۡمَصِيرُ ١٥ ﴾ [الحديد: ١٥]
‘‘আজ তোমাদের নিকট হতে কোন বিনিময় গ্রহণ করা হবে না এবং যারা পৃথিবীতে (প্রকাশ্য দাম্ভিকতার সাথে আল্লাহর আয়াতগুলো) অস্বীকার করেছিলে (তাদেরকেও বিনিময় নিয়ে মুক্তি দেয়া হবে না। উপরন্ত বলা হবে) তোমাদের ঠিকানা জাহান্নাম। সে জাহান্নামই তোমাদের খোঁজখবর গ্রহণকারী অভিভাবক। কতো নিকৃষ্ট পরিণতি।’’ (সূরা আল হাদীদ: ১৫)
সত্যি কথা বলতে কি, সেখান হতে বের হওয়া তো দূরের কথা একমাত্র জাহান্নাম ছাড়া অন্য কোনো বন্ধু অভিভাবক কিংবা সহায্যকারীও পাবে না।
কাজেই সেখানে ইচ্ছায় হোক অথবা অনিচ্ছায় হোক, শাস্তি গ্রহণ করতেই হবে। এমন শাস্তি দেয়া হবে যে, ধৈর্য্য ধারনের প্রশ্নই উঠে না। তাই বলে ধৈর্য্য না ধরে জাহান্নামীদের কোন উপায় ও অবশিষ্ট থাকবে না।
শয়তান নিজেকে দায়িত্বমুক্ত ঘোষণা করবে
মানুষ যে শয়তানের প্ররোচনা ও ওয়াসওয়াসার কারণে গুণাহ করেছে এবং খারাপ পথে চলেছে সে শয়তান হাশরের দিন দোযখীদেরকে দেখে বলবে, তোমাদের শাস্তির জন্য আমি দায়ি নই, তোমরাই দায়ী। কোরআন এ মর্মে আমাদেরকে বলে:
﴿وَقَالَ ٱلشَّيۡطَٰنُ لَمَّا قُضِيَ ٱلۡأَمۡرُ إِنَّ ٱللَّهَ وَعَدَكُمۡ وَعۡدَ ٱلۡحَقِّ وَوَعَدتُّكُمۡ فَأَخۡلَفۡتُكُمۡۖ وَمَا كَانَ لِيَ عَلَيۡكُم مِّن سُلۡطَٰنٍ إِلَّآ أَن دَعَوۡتُكُمۡ فَٱسۡتَجَبۡتُمۡ لِيۖ فَلَا تَلُومُونِي وَلُومُوٓاْ أَنفُسَكُمۖ مَّآ أَنَا۠ بِمُصۡرِخِكُمۡ وَمَآ أَنتُم بِمُصۡرِخِيَّ إِنِّي كَفَرۡتُ بِمَآ أَشۡرَكۡتُمُونِ مِن قَبۡلُۗ إِنَّ ٱلظَّٰلِمِينَ لَهُمۡ عَذَابٌ أَلِيمٞ ٢٢ ﴾ [ابراهيم: ٢٢]
“যখন সব কাজের ফয়সালা হয়ে যাবে, তখন শয়তান বলবে: নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদেরকে সত্য ওয়াদা দিয়েছেন এবং আমি তোমাদের সাথে ওয়াদা করে ভঙ্গ করেছি। তোমাদের উপর তো আমার কোন ক্ষমতা ছিল না, কিন্তু এতটুকু যে, আমি তোমাদেরকে ডেকেছি, তারপর তোমরা আমার কথা মেনে নিয়েছো। সুতরাং তোমরা আমাকে র্ভৎসনা করো না, বরং নিজেদেরকেই ভৎর্সনা করো। আমি তোমাদের উদ্ধারে সাহায্যকারী নই এবং তোমারাও আমার উদ্ধারে সাহায্যকারী নও। ইতিপূর্বে তোমরা আমাকে যে আল্লাহর শরীক করেছিলে, আমি তা অস্বীকার করি। নিশ্চয়ই যারা যালেম তাদের জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদয়ক শাস্তি। (সূরা ইব্রাহীম: ২২)
জাহান্নামের তত্ত্বাবধায়ক মালিকের নিকট অনুনয় বিনয়
জাহান্নামীরা যখন শাস্তি ভোগ করতে করতে অতিষ্ট হয়ে যাবে তখন জাহান্নামের তত্ত্বাবধায়ক মালিক ফেরেশতাকে অনুনয় বিনয় করে বলবে:
﴿ وَقَالَ ٱلَّذِينَ فِي ٱلنَّارِ لِخَزَنَةِ جَهَنَّمَ ٱدۡعُواْ رَبَّكُمۡ يُخَفِّفۡ عَنَّا يَوۡمٗا مِّنَ ٱلۡعَذَابِ ٤٩ قَالُوٓاْ أَوَ لَمۡ تَكُ تَأۡتِيكُمۡ رُسُلُكُم بِٱلۡبَيِّنَٰتِۖ قَالُواْ بَلَىٰۚ قَالُواْ فَٱدۡعُواْۗ وَمَا دُعَٰٓؤُاْ ٱلۡكَٰفِرِينَ إِلَّا فِي ضَلَٰلٍ ٥٠ ﴾ [غافر: ٤٩، ٥٠]
“আর যারা আগুনের অধিবাসী হবে তারা জাহান্নামের প্রহরীদেরকে বলবে, ‘তোমাদের রবকে ডাক, তিনি যেন আমাদের থেকে শাস্তি লাঘব করেন এক দিনের জন্য।’
তারা বলবে, ‘তোমাদের কাছে কি স্পষ্ট প্রমাণাদিসহ তোমাদের রাসূলগণ আসেননি?’ জাহান্নামীরা বলবে, ‘হ্যাঁ, অবশ্যই।’ প্রহরীরা বলবে, ‘সুতরাং তোমরাই ডাক; আর কাফিরদের ডাক শুধু ব্যর্থই হয়।” [সূরা গাফির: ৪৯, ৫০]
আল্লাহর কাছে তাঁর সুন্দর নাম ও গুণাবলীর অসীলায় আমরা তাঁর জান্নাত চাই, আর জাহান্নাম থেকে মুক্তি চাই। হে আল্লাহ, আপনি আমাদের দো‘আ কবুল করুন। আমীন।।
[1] মুসলিম, অধ্যায়: ঈমান ( كتاب الإيمان ), পরিচ্ছেদ: জান্নাতের সবচেয়ে নিম্নস্তরের জান্নাতবাসী (باب أَدْنَى أَهْلِ الْجَنَّةِ مَنْزِلَةً فِيهَا), হাদিস নং- ৪৮৫
[2] দুর্বল সনদে; তবে ইবন উমর রাদিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে ত্বাবারানীর কাছাকাছি অর্থে একটি বর্ণনা রয়েছে, শাইখ আল-আলবানী সেটাকে হাসান বলেছেন, তাই উপরের বর্ণনাটি রেখে দেওয়া হলো। [সম্পাদক]
[3] বুখারী, আস-সহীহ, হাদিস নং- ৩২৫১; মুসলিম, ২৮২৭।
No comments:
Post a Comment